মিডিয়ার উপস্থাপনাঃ প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া

মিডিয়ায় যেভাবে আমাদের কোন ব্যক্তি, বস্তু, আইডিয়া কিংবা ইমেজের পরিচিত করায় সেভাবেই আমরা সেই ব্যক্তি, বস্তু, আইডিয়া কিংবা ইমেজের একটা আকৃতি(shape) দেই আমাদের মাথায় এবং বাস্তবে সেভাবেই চিন্তা করি বা সেই জিনিসগুলোকে দেখি।

জিবান আহমদ

আমি বরং একটা অভিজ্ঞতার গল্প দিয়েই শুরু করি; গিয়েছিলাম নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপে। এটা ছিল হাতে-কলমে মাঠকর্ম শিখতে আমাদের একটি ভ্রমণবিশেষ। নোয়াখালী সম্পর্কে একটা প্রবাদ শুনেছিলাম, প্রবাদটা এরকম যে, “যার শুরুতে গালি, মাঝখানেও গালি, শেষেও গালি তার নাম নোয়াখালী”। এটা একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার যে একটা অঞ্চলের সাথে গালি কিভাবে মিশে গেলে এরকম একটি প্রবাদের উপস্থিতি সেই এলাকা সম্পর্কে পাওয়া যায়। আমাদের তত্ত্বাবধানে যিনি ছিলেন তিনি পরামর্শ দিলেন আমরা (আমাদের ৪ জনের গ্রুপ) যেন নোয়াখালীর “আঞ্চলিক গালি সংস্কৃতি” নিয়ে কাজ করি। ফিল্ডে গিয়ে তো মহাঝামেলায় পড়লাম। কেউ তো মুখ-ই খোলে না। লোকে যতই বলুক না কেন যে এই অঞ্চলের লোকজন গালাগালি করে আর তারাই-বা যতই গালাগালি করুক না কেন আমাদের কাছে কেন তারা বলতে যাবে এগুলো? তারা বরং আমাদের বলল যে, তারা আগে এগুলো (মারামারি, ঝগড়া, গালাগালি)  করত,  এখন আর করে না মানে এখন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। তো সেখানে কাজ করার জন্য আমাদের কয়েকটি গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করার জন্য বলা হয়েছিল। তার মধ্যে একটা ছিল অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাতকার। তো, আমরা ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে তাদের বলতে না চাওয়ার কিংবা না বলার কারণে বারবার হতাশ হচ্ছিলাম। পরে দেখলাম এভাবে ইন্টারভিউতে কাজ হচ্ছে না, আমরা তাদের সাথে কথা না বলে বরং তাদের কথাবার্তা, কার্যক্রম ইত্যাদি পর্যবেক্ষণে (observation) মনোযোগ দিলাম। এটা অনেক কাজে দিয়েছিল যেহেতু আমরা দেখতে চাইছিলাম যে তারা কোন কোন কন্টটেক্সটে গালি বা স্ল্যাং শব্দগুলো ব্যবহার করে। পথিমধ্যে একজনের সাথে দেখা হলো যার বাড়ি এই নিঝুম দ্বীপেই। তো গালি নিয়ে কাজ করতে গেলে তো আর কাউকে শুরুতেই গালির কথা জিজ্ঞেস করা যায় না। 

আমরা প্রথমে স্থানীয় ভাষা নিয়ে কথা বলতে চাইলাম। কিন্তু,  তার সাথে কথা বলা শুরু করতেই তিনি আঞ্চলিক ভাষায় কথা না বলে একদম শুদ্ধ-বাংলায় কথা বলা শুরু করলেন। আমরা তার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম তার জন্ম এখানে এবং পড়াশোনা করেন হাতিয়ায়।

আরো কিছুক্ষণ আলাপ হওয়ার পর জানতে পারলাম উনি ইচ্ছা করেই এরকম করেছেন মানে শুদ্ধ-বাংলায় কথা বলছেন। কারণ তিনি বাইরের কারো সাথে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে লজ্জা পান! 

আমরা আগ্রহী হলাম জানতে, কেন তার এমনটা হয় বা কেন তিনি এরকম অনুভব করেন? তিনি একটা নাটকের কথা বললেন, যেটার নাম “ব্যাচেলর পয়েন্টে”। সেটাতে নোয়াখালী অঞ্চলের একটা চরিত্র আছে। যেটাতে সেই চরিত্রে যিনি অভিনয় করেন তার কথা বলার ভঙ্গি অনেকটা হাস্যরসাত্মক। তিনি অভিযোগ করেন যে এটাতে নোয়াখালী ভাষাকে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করা হয়, যাতে লোকজনকে বিনোদন দেয়া যায়, আমোদিত করা যায়। কিন্তু নোয়াখালী অঞ্চলের একজন বাসিন্দা হিসেবে যখন বন্ধুমহলে এই ভাষায়  তিনি কথা বলেন তখন বন্ধুরা সেই নাটকের দৃশ্যের মজার মজার ডায়লগগুলো নিয়ে এসে তার সাথে মজা নেয়। তাকে ক্ষ্যাত ভাবে কিংবা বন্ধুমহলে তার নামই হয়ে যায় ‘নোয়াখাইল্লা’। 

চিন্তা করুন তো কি সাংঘাতিক উপস্থাপনা! আপনি কোন একটা বিষয়কে এমনভাবে উপস্থাপন করছেন যেটার জন্য কেউ একজন তার আইডেন্টিটিকে লুকাতে বাধ্য হচ্ছে। সেটা একজন ব্যক্তিই হোক না কেন। এরকম আরো অনেক গল্প আছে যেগুলোর কি না অনেকের ভিতরেই থেকে যায়, প্রকাশ  হয় না। এই গল্পগুলো কিন্তু সামান্য নয়। ধীরে ধীরে এই ব্যাপারগুলো একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

আমরা আরেকজন রেস্তোরাঁর মালিকের সাথে কথা বলছিলাম এখানকার ভাষা নিয়ে। তো, তিনি বলেলেন যে, তার দোকানে কেউ ‘পানি’ কে ‘হানি’ বললে তিনি ধমক দেন। আমরা বললাম, “কেন?” তিনি বললেন, ” ‘পানি’-কে ‘হানি’ কইব ক্যান, বইয়ে লেহা ‘পানি’ হেডা দেহে না? ” এই যে রুপান্তরের চর্চা শুরু হয়ে গেছে। এই মানুষগুলো আঞ্চলিকতাকে একধরণের অনগ্রসরতা বলে মনে করছে। তখন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেও অস্বস্তিবোধ করছে। যখনই মেইনস্ট্রিম থেকে কেউ এখানে আসে বা টেলিভিশনে তাদের ভাষার ভুল উপস্থাপন কিংবা সোশাল মিডিয়ায় তাদের নিয়ে ট্রল করা, সেই জায়গা থেকে তাদের মনে ভাবনা উদিত হয় যে তাদের এই অবস্থা বদলে  বাইরে থেকে যারা এখানে আসে ঠিক তাদেরই মতো হতে চাওয়া বা হওয়া যায় কি না।  নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দারা সেখানে যারা বেড়াতে যায় তাদের  অনুসরণ এবং অনুকরণ করতে চায়। যেটা কি না একধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়াও বটে। মজার ব্যাপার হলো, এই ধরনের কাজগুলো উপনিবেশিত দেশগুলোতে হয়, তারা তাদের ঔপনিবেশিক দেশগুলোকে অনুসরণ, অনুকরণ করতে চায়। যেটাও কিনা একধরনের মনস্তাত্ত্বিক একটা প্রক্রিয়া। যার কথা ফ্রাঞ্চ ফানো বলেছেন। সেটা মূল আলাপের জায়গা না, আলাপের জায়গা হলো রিপ্রজেন্টেশন। এবং এর সাথে জড়িত ছোট ছোট গল্প—যা উঠে আসে না—কিন্তু  বাস্তবে ঘটে থাকে।

বাংলাদেশি অনেক সিনেমা কিংবা নাটকে অনেক সময় গ্রাম্য চরিত্র দেখানো হয় । সেটা কখনোবা হয় এমন কোন চরিত্র যে কিনা এই প্রথম শহরে গেছে এবং তাকে খুবই হাস্যকর ভাবে উপস্থাপন করা হয়। এরকম যেন সে কিছু বুঝে না, উলটা পালটা কি করে।  তো এখন যে ছেলে বা মেয়ে তারা সারাজীবনে একবারও গ্রামে যায় নি, তখন এটা দেখে তার গ্রাম কিংবা গ্রামের মানুষ সম্পর্কে কি ধরনের ধারণা তৈরি হতে পারে? সে যখন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কিংবা শহরের বড় নামীদামী স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে দেখতে পায় তার ব্যাচমেট গ্রাম থেকে এসেছে, তখন সে তার গ্রাম্য বন্ধুটি সম্পর্কে কি ধারণা করতে পারে। যদি কখনো তার সাথে না মিশে তাহলে কি সে সেই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। 

আমরা শুধু পাশ্চাত্যে অরিয়েন্টালিজম নিয়ে কথা বলি। পাশ্চাত্যরা আমাদের এইভাবে দেখায়, ঐভাবে দেখায়, নিকৃষ্ট ভাবে উপস্থাপন করে। কিন্তু আমরা তো স্বদেশী হয়েও নিজেদের হাস্যকরভাবে প্রতিনিয়তই উপস্থাপন করে যাচ্ছি, দ্বিধা করছি না। 

হয়তো বলা যেতে পারে এগুলো তো রেয়ার কেস। এগুলো নিয়ে এতো মাথা না ঘামালেও চলে। কিন্তু একজন নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে এই ছোট ছোট গল্পগুলোর মূল্য আমার কাছে অনেক।ইতিহাস থেকেও যদি বলি আমরা বরাবরই কোন কিছুকে ঢালাওভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে তাকে একটা রূপ দিয়ে দেই ঠিকই কিন্তু এর পিছনের অনেকগুলো গল্প আমরা বাদ দিয়ে  দেই। ফলে সেই সাথে সেখান থেকে স্মৃতি, আত্মত্যাগ, অবদানের গল্পও হারিয়ে যায়। সেটা কি রকম? একটা উদাহরণ দেই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসকল  মা-বোনেরা তাদের সম্ভ্রম হারিয়ে ছিলেন। আমরা জাতীয় দিবসে বা কোন অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে  তাদের অবদানকে দু-একলাইনে উদ্ধার করে দেই। কারণ এই গল্পগুলো আমাদের অস্বস্তির জায়গা। কিন্তু যারা এই সময়টা পার করেছেন শুধু তারাই জানেন যে তারা কিভাবে এটা অতিক্রম করেছেন। নীলিমা ইব্রাহীমের “আমি বীরাঙ্গনা বলছি”  বইয়ের গল্পগুলো কি বলে আমাদের? ছোট ছোট গল্প গুলো কেন জরুরি আরেকটা উদাহরণ দেই, আমাদের এলাকায় একছেলে যে কিনা তাদের সময়ে ইন্টারমিডিয়েটে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিল। তার সহপাঠিনী, যিনি এখন একটা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, মেয়েও আছে দুইটা। তিনি বলছেন, তার সাথের সেই মেধাবী বন্ধুটি কিভাবে ঝরে পড়ল। অথচ সে তখন সেই এলাকার অন্যতম মেধাবী ছাত্র। তিনি বলছিলেন, প্রেম ঘটিত এক বিবাদে সেই ছেলাটা জড়িয়ে পড়ে। তার নাম ছিল আমির। তো সেখানে মারামারি করার কারণে লোকজন তাকে গুণ্ডা বলা শুরু করল। যেহেতু ভালো ছাত্র হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিল সেহেতু গুন্ডা নামটা খুব ভালোভাবেই ছড়ালো। ধীরে ধীরে সে সমাজের বিরাগভাজন হলো। সে আর সেখান থেকে ফিরতে পারল না। বলবেন তো কি হলো, এরকম তো অনেকেই হয়, একজন নষ্ট হয়ে গেছে তো কি হয়েছে?  ব্যাপারটা এখানে নয়, মূল ব্যাপারটা হলো কাউকে যখন আমরা কোন কাজের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন তকমায় তকমায়িত করি যেটা কি না সে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। বিবাদে জড়িয়ে যে মেয়েকে বিয়ে করল সে মেয়েটা এখন গুন্ডার বউ। যে সন্তানেরা পৃথিবীতে আসবে তাদের পরিচয় হবে অমুক গুন্ডার ছেলে। কি মারাত্মক আইডেন্টিটি। ভাবেন একটাবার। আর যে মা সন্তানের সাফল্যে গর্বে মাথা উঁচিয়েছিলেন তার কি হবে। বেদনায় সারাটি জীবন ধুকে ধুকে কাটাতে হবে। একটা গল্পকে অনেকভাবে দেখা যায়। আপনারা বলবেন, ও তো চাইলেই ভালো হতে পারত! আমি বলব গ্রাম কিংবা গ্রামের লোকদেরকে সম্পর্কে আপনার কোন আইডিয়া আছে? আমরা যে সাধারণীকরণ করি গ্রামের লোকেরা সহজ সরল। বা আপনারা যাদেরকে বলেন ‘সরল সমাজ’। নৃবিজ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করে দেখুন সেগুলো সরল তো নয়ই বরং সাংঘাতিকভাবে জটিল। এটা তো অনেকদিন আগের ঘটনা। আজকাল সোশাল মিডিয়াগুলির যা অবস্থা, কেউ কোন নামে ভাইরাল হলেই হয়েছে। কিন্তু ভাইরালেরপরের গল্পটা আমরা তো আর জানি না। যেমন সবাই মিলে সোশাল মিডিয়ায় কাউকে ‘নাস্তিক’ ট্যাগ দিয়ে দিলাম তার কোন একটা বক্তব্য বা মন্তব্যের জন্য। ক’দিন তো হই হুল্লোড় হবেই, কিন্তু তারপর। আমি কিন্তু এখানে যারা স্বঘোষিত নাস্তিক তাদের কথা না বরং যারা ভাইরালের ঠেলায় হয়ে যান কিংবা লোকজন বানিয়ে ফেলে তাদের কথা বলছি।  ঐ ব্যক্তির সামাজিক অবস্থা কিংবা পরিবার -পরিজন— তাদের কি হবে? 

আরো একটা ব্যাপার এখানে যোগ করা যায়। মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বিষয়ের সাথে পরিচিত হই। মিডিয়া আমাদের সামনে কোন জিনিসকে যেভাবে উপস্থাপন করে আমরা ঠিক সেভাবেই সেটার সাথে পরিচিত হই (এখানে বড় একটা ফাঁক থেকে যায়)। মিডিয়া যেভাবে আমাদের কোন ব্যক্তি, বস্তু, আইডিয়া কিংবা ইমেজের পরিচিত করায় সেভাবেই আমরা সেই ব্যক্তি, বস্তু, আইডিয়া কিংবা ইমেজের একটা আকৃতি(shape) দেই আমাদের মাথায় এবং বাস্তবে সেভাবেই চিন্তা করি বা সেই জিনিসগুলোকে দেখি।

আমাদের যেটা হয়, এমনকি আমারও, কাউকে একটা উলের লম্বা টুপি মাথায় দিতে দেখলে মনে হয়, “আরে, লোকটা ‘রাজাকার মার্কা’ টুপি পরেছে কেন??” মানে, রাজাকারের কথা মাথায় আসলেই প্রথমেই যে রূপটা মাথায় আসে সেটা হলো, দাঁড়ি, টুপি, পাঞ্জাবি পরা শয়তানের মতো চেহারার লোক। কিন্তু, আমি তো সরাসরি রাজাকার দেখিনি। তাহলে রাজাকার যে দেখতে এরকম আমি জানলাম কোত্থেকে?? রাজাকারদের কথা আমরা জানতে পারি বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, নাটক, ফিল্ম ইত্যাদি থেকে। জানতে পারি তাদের নৃশংসতার কাহিনী। কিন্তু রাজাকারদের এই রূপই কি আসল রূপ?? আমরা প্রতিনিয়তই নাটকে, সিনেমায় যে দাড়ি, টুপি, পাঞ্জাবি পরা রাজাকারদের দেখতে পাই, যুদ্ধের সময়কার রাজাকাররা আসলেই কি এরকম ছিল?? আমাদের সামনে নির্মিত কিংবা উপস্থাপিত রূপই কি রাজাকারের আসল রূপ?? হুম, এটা মিথ্যা নয় যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় কয়েকটি ইসলামি দল ( যেমন-জামাতে ইসলাম) মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু তাই বলে আমরা যদি সাধারণীকরণ করে ফেলি যে ‘রাজাকার’ মানেই ‘ইসলামি প্রতীক সম্বলিত’ ব্যক্তি এবং বরাবরই এই একই ইমেজ উপস্থাপন করি, তাহলে এখনে একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়। আমি কিন্তু রাজাকারদের পক্ষ নিচ্ছি না, তারা অবশ্যই ঘৃণিত এবং কঠিন শাস্তির যোগ্য। আমার বলার জায়গা হচ্ছে আমরা কিভাবে তাদের উপস্থাপন করি আর আসলে তারা কি রকম। আর এরকম সাধারণীকরণের বিপদও আছে কারণ এভাবে সঠিক ইতিহাসটা চাপা পড়ে যায়।

করোনাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে নিয়ে যে পরিমাণে ট্রল হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর একটা কারণ ছিল কঠোর লকডাউনের সময় বেশ কয়েকবার মারামারি এবং একটি জানাযার নামাজ। তো মজার ব্যাপার হলো,  যখন সবাই ট্রল করছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে নিয়ে তখন সবাই স্ট্যাটাস শেয়ার করার সময় ফ্রেন্ডলিস্টে যাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া তাদেরকে ট্যাগ করছিল কিংবা কোন পোস্টের মন্তব্যের ঘরে তাদের নাম মেনশন করছিল। অনেকেই সেটা থেকে বাঁচতে তাদের হোম টাউন বা লিভিং প্লেস অপশন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাম বদলে ফেলেছিল। আমার জানামতে কয়েকজন এরকম করেছিল।এখন আমি যদি প্রশ্ন করি কেন একজন লোকও কারো ট্রল থেকে বাঁচতে নিজের জেলা শহরের নাম পাল্টাতে বাধ্য হয়?  ঐদিন দেখলাম  একজন স্ট্যাটাস শেয়ার করেছে, সেটা এরকম  “আই সেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দে হিয়া(র) মারামারি” (I say ব্রাহ্মণবাড়িয়া, They hear মারামারি) ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন তো! মূলকথা হলো , আমরা যে কাউকে ইচ্ছামতো বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করি কিংবা তাদের বিভিন্ন তকমা দেই — আমাদের এই উপস্থাপনা কিংবা তকমায়িতকরণ কারো জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে যেটা কিনা তার সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। কিন্তু মিডিয়া কিংবা সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপারগুলো অহরহ হয় । সুতরাং, এই জায়গাগুলোতে অধিক সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ আমাদের একেকটা ক্লিক (সেটা হতে পারে শেয়ার, রিয়েক্ট) একেকটা মন্তব্য এই ব্যাপারগুলোকে আরও প্রসারিত করতে পারে। এই কাজে সহযোগী না হওয়াই উত্তম।

শিক্ষার্থী, 

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

যোগাযোগঃ jiban43@student.sust.edu

Writing is not a view of the School of Thought, it is entirely the opinion of the Author.

If you want to share your thought, you can mail us at- editor.sot@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *