এই লেখাটিতে ব্রিটিশ দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ বার্ট্রান্ড রাসেলের শিক্ষার লক্ষ্য নিয়ে কিছু দর্শন তুলে ধরা হয়েছে। রাসেলের দৃষ্টিভঙ্গিতে, শিক্ষা শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম নয়; এটি মানব চরিত্রের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটায় এবং মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে। লেখাটিতে রাসেল শিক্ষার মাধ্যমে একটি নতুন পৃথিবী গড়ার ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেছেন, যেখানে মানুষ স্বাধীন, বুদ্ধিদীপ্ত ও সহানুভূতিশীল হবে।
শিক্ষার লক্ষ্য
বার্ট্রান্ড রাসেল শিক্ষার মূল লক্ষ্য হিসেবে চারটি গুণকে তুলে ধরেছেন, যেগুলো মানব চরিত্রের ভিত্তি তৈরি করে। এগুলো হলো:
1. উদ্যম বা প্রাণশক্তি (Vitality): রাসেলের মতে, শিক্ষা মানুষের ভেতরের প্রাণশক্তিকে জাগ্রত করে। এই গুণটি মানুষকে জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহসী করে তোলে। উদ্যম বা প্রাণশক্তি মানুষের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করে, যা তার চারপাশের জগৎকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
2. সাহস (Courage): সাহস বা মনোবল মানুষের মনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাহস ছাড়া একজন মানুষ তার জীবনে উদ্দীপনা খুঁজে পায় না। রাসেলের মতে, সাহসী মানুষ নিজের নীতি ও আদর্শে স্থির থাকে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। শিক্ষা মানুষের মধ্যে সাহসের বীজ বপন করে এবং তাকে দায়িত্বশীল করে তোলে।
3. সংবেদনশীলতা বা সহানুভূতি (Sensitiveness): এই গুণটি মানুষের মধ্যে অন্যদের প্রতি সহানুভূতি এবং আবেগপ্রবণতা বৃদ্ধি করে। সংবেদনশীলতা মানুষের মনকে কোমল করে তোলে এবং তাকে সহমর্মিতায় উদ্বুদ্ধ করে। রাসেলের মতে, শিক্ষিত মানুষের উচিত অপরের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারা এবং তার প্রতিকার করার চেষ্টা করা।
4. বুদ্ধিমত্তা (Intelligence): রাসেলের মতে, শিক্ষা মানুষের জ্ঞান অর্জনের শক্তিকে বৃদ্ধি করে এবং তাকে সত্যিকারের বুদ্ধিদীপ্ত করে তোলে। বুদ্ধিমত্তা মানুষের চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করে, যা তাকে জটিল সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
শিক্ষার বিপরীত গুণাবলী
রাসেল চারটি গুণের বিপরীতে চারটি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যেরও উল্লেখ করেছেন, যেগুলো মানব চরিত্রের অবনতি ঘটায়। এগুলো হলো:
1. আলস্য (Laziness): আলস্য মানুষের কর্মশক্তি হ্রাস করে এবং তার লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করে। এটি তার শারীরিক এবং মানসিক ক্ষমতাকে অবদমিত করে রাখে।
2. ভীরুতা (Cowardice): ভীরুতা মানুষের সাহসী হওয়ার ক্ষমতাকে দমন করে। এটি তাকে ঝুঁকি নিতে বাধা দেয় এবং জীবনে সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে নষ্ট করে।
3. অস্থিরতা (Hasten): অস্থিরতা মানুষের মনকে শান্ত রাখে না এবং তাকে সহজেই ভ্রান্তির পথে নিয়ে যায়। অস্থির মানুষ কোনো কাজ ধৈর্য নিয়ে করতে পারে না এবং তার জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
4. বোকামি বা মূর্খতা (Stupidity): মূর্খতা মানুষের চিন্তাশক্তিকে বিকৃত করে এবং তার জ্ঞানের পরিধি সংকীর্ণ করে। এটি তাকে সুস্থ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হতে বাধা দেয়।
শিক্ষার মাধ্যমে নতুন পৃথিবী গড়ার ধারণা
রাসেল মনে করেন যে শিক্ষার মাধ্যমে আমরা একটি নতুন পৃথিবী গড়তে পারি। তার মতে, প্রকৃত শিক্ষা মানব চরিত্রের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটায় এবং মানুষকে মুক্তচিন্তা ও নৈতিকতার পথে ধাবিত করে।
শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা শিক্ষার লক্ষ্য ও আদর্শ অর্জনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বার্ট্রান্ড রাসেলের শিক্ষাবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিতেও এসব সীমাবদ্ধতা প্রযোজ্য হতে পারে। এখানে শিক্ষার কিছু প্রধান সীমাবদ্ধতা আলোচনা করা হলো:
১. প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সীমাবদ্ধতা
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক সময় শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও স্বাধীন চিন্তার পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়। একটি নির্দিষ্ট সিলেবাসের মধ্যে আবদ্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা নিজেদের চিন্তাভাবনা প্রসারিত করতে পারে না। এটি শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনে একটি বড় সীমাবদ্ধতা।
২. অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা
শিক্ষা অনেক সময় অর্থনৈতিকভাবে সহজলভ্য হয় না। অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ পায় না এবং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণেও ব্যর্থ হয়। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে উন্নত করার রাস্তা বাধাগ্রস্ত হয়।
৩. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সীমাবদ্ধতা
কিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ও শিক্ষার প্রসারে বাধা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে রক্ষণশীল সমাজে, কিছু ক্ষেত্রে নারী শিক্ষাকে অবহেলা করা হয় বা অবরোধ করা হয়। এমন সমাজে নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণ বা কর্মজীবনে প্রবেশের পথ সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
৪. শিক্ষকদের দক্ষতার সীমাবদ্ধতা
শিক্ষকদের জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব শিক্ষার মানকে হ্রাস করতে পারে। একজন দক্ষ ও অনুপ্রেরণাদায়ী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস ও আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেন, যা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করে। কিন্তু শিক্ষকদের দক্ষতা ও মান উন্নত না হলে শিক্ষার আদর্শ অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে।
৫. প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা
বর্তমান যুগে প্রযুক্তি শিক্ষার অন্যতম উপাদান। কিন্তু সব স্থানে প্রযুক্তিগত সুবিধা সমানভাবে পাওয়া যায় না। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট, কম্পিউটার বা ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণের অভাব রয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে।
৬. শিক্ষানীতির সীমাবদ্ধতা
কিছু দেশে শিক্ষানীতি সঠিকভাবে প্রণয়ন বা প্রয়োগ হয় না। সঠিক শিক্ষানীতি না থাকলে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত দক্ষতা, স্বাধীন চিন্তা, এবং নৈতিকতার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। শিক্ষানীতি যদি শুধু পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভরশীল হয়, তবে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও বাস্তব জীবনের দক্ষতা অর্জন ততটা গুরুত্ব পায় না।
৭. মানসিক ও মানসিক চাপ
অতিরিক্ত চাপ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার জন্য অভিভাবক ও শিক্ষকদের চাপ শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপ শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও ব্যক্তিগত বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
৮. সমতার অভাব
শিক্ষার ক্ষেত্রে লিঙ্গ, জাতি, ভাষা, অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে বৈষম্য একটি বড় সীমাবদ্ধতা। সমান শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত না হলে সমাজে সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, যা রাসেলের শিক্ষার নতুন পৃথিবীর আদর্শের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
৯. শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগের অভাব
অনেক শিক্ষার্থী পাঠ্যসূচি বা শিক্ষাব্যবস্থার সাথে একাত্মতা অনুভব করে না, যা শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি করে। পাঠ্যসূচির সাথে শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সম্পর্ক না থাকলে তাদের মধ্যে পাঠের আগ্রহ সৃষ্টি হয় না।
১০. পরীক্ষার ফলাফলের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা
শিক্ষার মান নির্ধারণে পরীক্ষার ফলাফলকে অতিমূল্যায়ন করা হয়। এটি শিক্ষার মূল লক্ষ্য থেকে সরে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, কারণ শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল ভালো ফলাফল নয় বরং একটি ব্যক্তির সামগ্রিক বিকাশ।
উপসংহার
এই সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এবং নীতিমালার সংস্কার প্রয়োজন। রাসেলের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি উন্নত পৃথিবী গড়তে হলে, এই সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করা অত্যন্ত জরুরি
B.Russel শিক্ষককে তিনি problem solver হিসাবে দেখেছেন তিনি একজন skill person but not a role model,,,হোয়াটহেড এর বিতর্কসহ বিস্তারিত বর্ননা কর
বার্ট্রান্ড রাসেল শিক্ষকের ভূমিকাকে কিছুটা ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। তার মতে, একজন শিক্ষককে কেবলমাত্র গাইড বা সমস্যা সমাধানকারী হিসেবেই কাজ করা উচিত, তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে একটি নিখুঁত রোল মডেল হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার প্রয়োজন মনে করেন না। রাসেলের শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি এবং আলফ্রেড নর্থ হোয়াইটহেডের (A.N. Whitehead) দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে এ নিয়ে বেশ কিছু মতবিরোধ রয়েছে।
রাসেলের দৃষ্টিতে শিক্ষক: সমস্যা সমাধানকারী
বার্ট্রান্ড রাসেলের মতে, শিক্ষকের প্রধান ভূমিকা হলো শিক্ষার্থীদের কাছে একটি সহায়ক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থিত থাকা, যিনি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানে সহায়তা করেন। রাসেল মনে করতেন, শিক্ষকের উচিত তার ব্যক্তিগত জীবনের আদর্শ বা নৈতিক ধারণা শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে না দেওয়া। বরং, শিক্ষকের ভূমিকা হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে চিন্তার উন্মেষ ঘটানো এবং তাদের স্বাধীনভাবে চিন্তা ও প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করা। শিক্ষার্থীদেরকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিলে তাদের চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে, এবং এতে তারা জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
রাসেলের দৃষ্টিতে শিক্ষকের ভূমিকা কেন রোল মডেল নয়?
রাসেল মনে করতেন, কোনো ব্যক্তির জীবনের একদম নিখুঁত আদর্শ অনুসরণ করলে তা শিক্ষার্থীর স্বাধীন চিন্তার পথে বাধা হতে পারে। রাসেল বিশ্বাস করতেন যে প্রত্যেক মানুষকে তার নিজস্ব জীবন ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষকের কাজ হলো শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বিস্তৃত পরিধি ও সমস্যা সমাধানের জন্য যুক্তিবোধ তৈরি করতে সাহায্য করা, তবে এর জন্য শিক্ষকের ব্যক্তিগত জীবন অনুসরণ করা প্রয়োজন নেই। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই জীবনের নানান বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। রাসেলের মতে, এই পদ্ধতিতেই প্রকৃত শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণ হয়।
হোয়াইটহেডের মতামত: শিক্ষকের রোল মডেল হওয়ার ভূমিকা
অন্যদিকে, আলফ্রেড নর্থ হোয়াইটহেড শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে কিছু ভিন্ন মতামত পোষণ করতেন। তার মতে, শিক্ষকের উচিত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে কাজ করা। হোয়াইটহেড বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের নৈতিক ও সামাজিক আচরণ থেকে শিক্ষা নিতে পারে এবং এতে তারা অনুপ্রাণিত হবে। শিক্ষকের ব্যক্তিগত জীবন ও আচরণ শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে প্রভাবিত করে এবং তাদেরকে সঠিক পথে চালিত করতে পারে। হোয়াইটহেড মনে করতেন, শিক্ষার্থীরা প্রায়শই শিক্ষকদের অনুসরণ করার মাধ্যমে তাদের জীবনের আদর্শ তৈরি করে। সুতরাং, একজন শিক্ষক তার কর্ম ও আদর্শের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে আদর্শ উদাহরণ হতে পারেন।
রাসেল ও হোয়াইটহেডের বিতর্কের বিশ্লেষণ
রাসেল ও হোয়াইটহেডের মতবিরোধ শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে, এবং উভয়ের বক্তব্য শিক্ষার আলাদা আলাদা দিককে প্রতিনিধিত্ব করে। রাসেলের মত অনুযায়ী, শিক্ষকের ভূমিকা শিক্ষার্থীর স্বাধীন চিন্তা ও বুদ্ধিদীপ্ত বিকাশে সহায়ক হওয়া উচিত। তিনি শিক্ষকের কর্তৃত্ব বা আদর্শবাদী রোল মডেল হিসেবে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে ছিলেন। তার মতে, এভাবে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তিকে অবদমিত করেন এবং তাদের নিজের পথ খুঁজে পাওয়ার সুযোগ হ্রাস করেন।
অন্যদিকে, হোয়াইটহেডের মতামত অনুসারে শিক্ষকের আচরণ ও মূল্যবোধ শিক্ষার্থীর জীবনে একটি শক্তিশালী প্রভাব রাখতে পারে। শিক্ষার্থীরা তাদের আদর্শ খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রায়শই শিক্ষকদের দিকে তাকায় এবং তাদের জীবনকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে। হোয়াইটহেডের মতে, শিক্ষকের আদর্শিক ভূমিকা শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ গঠনে সহায়ক হয় এবং এতে সমাজে আদর্শ মানুষ তৈরির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
রাসেল ও হোয়াইটহেডের দৃষ্টিকোণ: কোনটি বেশি প্রাসঙ্গিক?
রাসেল ও হোয়াইটহেডের মতবিরোধ শিক্ষার বিভিন্ন লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রকাশ করে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় রাসেলের মতামত কিছু ক্ষেত্রে বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়, কারণ এটি শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চিন্তা ও সৃজনশীলতার দিকে নজর দেয়। রাসেলের মতে, শিক্ষা এমন হতে হবে যা শিক্ষার্থীদের কেবল জ্ঞান দানেই সীমাবদ্ধ না থেকে তাদের নিজস্ব যুক্তি ও বিবেককে জাগ্রত করে এবং তাদেরকে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে উদ্বুদ্ধ করে।
তবে, হোয়াইটহেডের মতামতও অনেক ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক, কারণ অনেক শিক্ষার্থীই তাদের শিক্ষকদেরকে জীবনের আদর্শ হিসেবে দেখে এবং তাদের আচরণ ও মূল্যবোধের অনুসরণ করে। শিক্ষকের আচরণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধ তৈরিতে সহায়ক হতে পারে।
উপসংহার
রাসেল এবং হোয়াইটহেডের এই বিতর্ক শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। রাসেলের মতে, শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী বিকাশের জন্য মুক্ত চিন্তার সুযোগ প্রদান করা, যেখানে শিক্ষকের কর্তৃত্ব নেই। অন্যদিকে, হোয়াইটহেড মনে করেন, শিক্ষকের আদর্শ শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। বর্তমান যুগে উভয় দৃষ্টিকোণই শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়। শিক্ষকদের উচিত সমস্যাসংকুল শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা এবং একই সঙ্গে নিজের আদর্শ চরিত্র গঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা জোগানো।