পাবলিক রিলেশন্সের ভূমিকা: mass communication এ এর প্রভাব

আজকের সমাজে পাবলিক রিলেশন্স (PR) বা জনসংযোগ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত হয়, যা গণমাধ্যম এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি, বজায় রাখা এবং উন্নত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণের কাছে একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, মূল্য, এবং মিশন পৌঁছানোর কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। পাবলিক রিলেশন্স, বিশেষ করে mass communication বা গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে, একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হয়, যা সরকারের, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সোসাইটির বা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জনসাধারণের সম্পর্ক স্থাপনে সহায়ক।

পাবলিক রিলেশন্সের মূল লক্ষ্য হলো একটি প্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার ইতিবাচক ইমেজ এবং সমর্থন তৈরি করা। এ উদ্দেশ্যে প্রিন্ট মিডিয়া, টেলিভিশন, রেডিও এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তু শ্রোতাদের কাছে প্রয়োজনীয় বার্তা পৌঁছানো হয়। এটি সঠিক তথ্য প্রদান করে জনগণের মধ্যে ভুল ধারণা সৃষ্টি হওয়া প্রতিরোধ করে এবং প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের প্রয়োজনীয়তার প্রতি জনগণের আগ্রহ সৃষ্টি করে। গণমাধ্যমের এই ধরনের ব্যবহার শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য লাভজনক নয়, বরং এটি জনগণের সাথেও একটি বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা সমাজে স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।

তবে, পাবলিক রিলেশন্সের প্রভাব শুধু ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে সীমাবদ্ধ নয়, এটি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণার সময় রাজনৈতিক দলগুলি তাদের বার্তা পৌঁছানোর জন্য পাবলিক রিলেশন্সের কৌশল ব্যবহার করে থাকে। এই কৌশলগুলি শুধু ভোটারদের মনোভাব পরিবর্তন করতেই কাজ করে না, বরং ভোটারের মধ্যে একটি নৈতিক দায়বদ্ধতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি বিশ্বস্ততা তৈরি করে।

এখানে একটি উত্তম উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশের ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের উদ্দেশ্য ও প্রস্তাবনা পৌঁছানোর জন্য পাবলিক রিলেশন্সের কৌশল ব্যবহার করে। প্রচারণার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের ইমেজ তৈরি করার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করার চেষ্টা করেছিল। গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, টেলিভিশন এবং রেডিও বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন, এসব ছিল নির্বাচনী পাবলিক রিলেশন্সের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। যদিও এই কৌশলগুলি অনেক সময় বিতর্কের জন্ম দেয়, তবুও এটি প্রমাণ করে যে পাবলিক রিলেশন্স জনগণের মনোভাব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, পাবলিক রিলেশন্সের কার্যক্রম পরিচালিত হয় সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের পাবলিক রিলেশন্স অফিস বা একটি বিশেষজ্ঞ দলের মাধ্যমে, যারা গণমাধ্যমের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, প্রেস কনফারেন্স আয়োজন, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন চালানো, এবং বার্তা প্রেরণের কৌশল নির্ধারণ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, বড় বড় কোম্পানি যেমন, নেসলে বা কোকাকোলা তাদের ব্র্যান্ডের ইমেজ বজায় রাখতে নিয়মিতভাবে পাবলিক রিলেশন্সের কৌশল ব্যবহার করে থাকে। তারা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচারণা এবং জনমত জরিপের মাধ্যমে তাদের পণ্য সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করার চেষ্টা করে। যেমন, কোকাকোলার “হোলো গ্লোবাল” ক্যাম্পেইনটি জনসাধারণের মধ্যে এক বিশ্বজনীন বন্ধন ও কোকাকোলার পণ্য সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো জাতীয় জরুরি পরিস্থিতি, যেখানে পাবলিক রিলেশন্স পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যেমন, COVID-19 মহামারির সময় সরকার এবং স্বাস্থ্য সংস্থাগুলির পাবলিক রিলেশন্স প্রচারণা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য, সামাজিক দূরত্বের প্রয়োজনীয়তা, মাস্ক পরিধান, টিকা গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের জন্য প্রচার চালানোর মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের বিজ্ঞাপন, প্রেস কনফারেন্স, সামাজিক মাধ্যম প্রচারণা ইত্যাদি মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল।

এছাড়া, মিথ্যা খবর বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে পাবলিক রিলেশন্সের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো মিথ্যা তথ্য বা ফেক নিউজের ফলে কখনও কখনও বিশাল জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে। এ সময়, পাবলিক রিলেশন্সের মাধ্যমেই তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা হয় এবং সঠিক বার্তা জনসাধারণের কাছে পৌঁছানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর খবর ছড়ানো হয়, তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংবাদমাধ্যম তা প্রতিরোধ করার জন্য তাদের পাবলিক রিলেশন্স দলকে কাজে লাগিয়ে সঠিক তথ্য প্রদান করে থাকে।

তবে, সবকিছু সঠিকভাবে পরিচালনা করা কঠিন হতে পারে, কারণ কখনও কখনও কিছু সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে পাবলিক রিলেশন্সের মাধ্যমে মিথ্যা বা পক্ষপাতমূলক তথ্য ছড়াতে পারে। এর ফলে, জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবও হতে পারে। এজন্য, পাবলিক রিলেশন্স কর্মীরা এবং গণমাধ্যমকে সতর্ক থাকতে হয় এবং নিশ্চিত করতে হয় যে তারা জনগণের জন্য সত্য, নির্ভরযোগ্য এবং স্বচ্ছ তথ্য প্রদান করছে।

মোটকথা, পাবলিক রিলেশন্স mass communication এ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর ইমেজ এবং জনসমর্থন তৈরির পাশাপাশি সমাজের মধ্যে সঠিক তথ্যের প্রবাহ নিশ্চিত করে। এটি শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং জনগণের মধ্যে সচেতনতা, বিশ্বাস এবং সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য। তবে, এর সঠিক ব্যবহার এবং জনস্বার্থের প্রতি দায়বদ্ধতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে এটি সমাজের কল্যাণে অবদান রাখতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *