মানবজীবন অনির্দিষ্ট পরিসীমায় আবদ্ধ, কোনকিছুই মানুষ আগে থেকে নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনা! শ্রদ্ধেয় শিক্ষক গবেষনা বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন যে, সামাজিক কোন বিষয় একেবারে ভুল বলতে পারবেনা। কারণ, তার পেছনে যৌক্তিক কারণ থাকতেই পারে, যা আমাদের ভেবে, নিরীক্ষা করে যাচাই করতে হবে। এরপর আসি সম্পর্কের বিষয়ে, সম্পর্ক যাই হোক যার সাথেই হোক, তার নির্দিষ্ট একটি বা বহু উদ্দেশ্য রয়েছে। এই উদ্দেশ্য তখনই সফল হবে, যখন পারস্পরিক উদ্দেশ্য এক হবে বা সবথেকে ভাল উদ্দেশ্যকে দুজন মানুষ সমর্থন করে এগিয়ে যাবে আর এই উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পথে যদি কেউ ভুল করে বা ভুল বোঝে, তাহলে একজন আরেকজনকে বুঝিয়ে তাদের আসল উদ্দেশ্যের কথা মনে করিয়ে দেবে, আর ভুল সংশোধনের চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে ভুলকে অবশ্যই বাড়তে দেয়া যাবেনা।
আসল ব্যাপার হল সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখা। মানুষ পরিবর্তনশীল! সে জানে যে, আজ সে যার সাথে সম্পর্কে জড়াচ্ছে, সে পরিবর্তন হতেই পারে বা তাকে ছেড়ে উদ্দেশ্য পরিবর্তন করতেই পারে। তাও সে সম্পর্ক চায়, বিশ্বাস গড়ে তুলতে চায়, আর ভালবাসতেও চায়। যখন সে তা পুরোপুরি পেরে ওঠে, তখন সে তাই বিশ্বাস করে আর বলে তার সম্পর্ক অটল, কারণ, সম্পর্কে পারস্পারিক বিশ্বাস রয়েছে। এত কথা কোনভাবেই আবেগি মনোভাবে নয় বরং রাষ্ট্রীয় উৎপাদনশীলতার কথা ভেবেই বলছিলাম। কারণ, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র এগুলোর প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে এরিস্টটল ছাড়াও বহু বিজ্ঞানী বলে গিয়েছেন নানান মতবাদ। এই তিনটে বিষয় একেবারেই গদবাধা নয় বরং বিশ্লেষণধর্মী প্রতিষ্ঠান একেকটি। এর কোনটিই দায়বদ্ধতা, সহমর্মিতা, স্বচ্ছতা ইত্যাদি দ্বারা সম্পর্ক জুড়তে কোথাও না কোথাও অপারগ নয়। পরিবার কখনওই সম্পর্কের বাইরে গিয়ে নয়। জীবনকে আমরা পারিবারিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত বা রাষ্ট্রীয় এসব যত ধাপেই ভাবিনা কেন এর উদ্দেশ্য একই । কারণ, ব্যক্তি হিসেবে আমাদের জীবনের যা উদ্দেশ্য, তাই সমাজ এবং রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করার মধ্যে দিয়েই বেশির ভাগ মানুষ জীবন যাপন করেন। সম্পর্ক শব্দটার সাথে কোথাও বিরোধিতা শব্দটাকে বোধ হয় মেলানো যায়না। আর ভুল হল সম্পর্কের সৌন্দর্য। কারণ, সম্পর্কে দরকার সামঞ্জস্যতা, মানিয়ে নেওয়া( ভালোর সাথে) যে ভাল করছে, তার ভালোটাকে উৎসাহ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, বিশ্বাস মজবুত করতে হবে। ভালোকে অন্যকোন তুচ্ছ বা ছোট শব্দ দিয়ে অসম্মান করাটা সম্পর্কের উদ্দেশ্যকে অসফল রাখার জন্য কম যথেষ্ট নয়। আমাদের দেশে বিয়ে ভাঙা নিয়ে বিচিত্র লোকের বিচিত্র কথা, কিন্তু সহজে মেনে চলার মত টোটকা খুব কম লোকই বলেন। ধর্মীয় ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেন, স্বামীকে মানেনা বলেই তো যত অশান্তি। কেউ বলেন, পুঁজিবাদি সমাজই এরজন্য দায়ী। কারোর মতামতকেই অশ্রদ্ধা না করেই আমি বলতে চাই যে, এসব কথা সমাজকে গড়বেনা নতুন করে। বরং এমন কিছু শেখান বা বলুন যা বাস্তবধর্মী এবং মানুষ সহজে গ্রহন করবে। জীবনে সকলেরই কথা থাকে, পরিস্থিতি থাকে। সেগুলো আমরা অপরপাশের লোক বুঝিনা। আর বুঝলেও সবসময় পাশে থাকার সুযোগ তৈরী হয়না। কি বা ক্ষতি যদি আমরা নিজের দিকে তাকিয়ে কথা বলি? ছোটবেলা থেকে নিজের জীবনের ঘটনাগুলো মনে করি? আজকাল আত্মসমালোচনার কথা মনে করিয়ে দিতে হয়, কোথাও কোথাও কোর্সও চালু হয়েছে এ সংক্রান্ত। এটা খুব ভাল দিক বটে, একইসাথে এটি সমাজের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বর্তমান টানাপোড়েনকেও ইঙ্গিত করে। তাই cooperation দরকার। ঝুঁকি এবং সুযোগ সুবিধা কে যাতে জোটবেঁধে লালন করা যায়। মানবজীবনই হয়ত এমন এক সুন্দর যায়গা, যেখানে মানুষ নিজেই পূর্বানুমানের অযোগ্য বিষয়কে অনুমানের যোগ্য করে নেয়। ওটাকেই তারপর তার সম্পর্কের সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলে। সব সম্পর্কের উদ্দেশ্য পাশে থাকা, সাথে থাকা হলেও, কৌশল আলাদা। কারন, একেকজনের জীবনের বাস্তব একেকরকম, কারো বাস্তব কেউ ভোগ করেনা এবং সামাল দেয়না। তাই সম্পর্কগুলো তুলনাহীন থাকাই ভাল। কারন, এটা সামাজিক প্রেক্ষাপট, প্রতিযোগিতার বাজার । ভাল কিছু দেখে মানুষ ভাল শিখতে পারে, মানে পুনর্বিনিয়োগ করতে পারে। Social fact substitute এবং complement দুটোই হতে পারে। যেমন, একজন আরেকজনের হয়ে কাজ সম্পন্ন করা, সমস্যায় পাশে থাকা, তবে আরেকজনকে পাশে থাকার সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে অতিরিক্ত আয়োজন সময় নষ্ট করে সম্পর্ককে দূরত্বের দিকে ঠেলে দেয়। নইলে একজন আরেকজনের গুরুত্ব যাচাই করতে পারবেনা নিজেদের কাছে। সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য দরকার সহনশীলতা, যাতে নতুনত্বকে বরণ করে নেওয়া যায়। সবকিছুতে ভালটাই খুঁজে বের করতে হবে।
যাতে সম্পর্ক মুক্ত বাতাস আর নিরাপদ সড়কের মত হয়। যার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর মনোবল দরকার। যা করছি, তাতে লাভ কি হবে আর ক্ষতি কি হবে, মাথায় রেখে করাই বোধ হয় ভাল।
পৃথিবীতে মানুষে এসেছে সম্পর্কের মধ্য দিয়েই, তাই সম্পর্কই হোক সবথেকে বড়। মানুষে মানুষে সম্পর্কের গুরুত্ব বাড়ুক।
ভাগ্যর ওপরে কিছুই নেই, তাই প্রতিযোগিতা আর স্বার্থপরতার কবলে সম্পর্কগুলো না হোক কবলিত।
তবে সবাই বিশ্বাস ভরসার মূল্য দেয়না, তাদের থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখাই শ্রেয়। যারা পরিবারের বাইরের
আমি অবশ্য তাদের কাছেও থেকে দেখি, কেন তারা এমন কাজ করে তা নিজের যায়গা থেকে ভেবে নেয়া জরুরি। আর আমারও ভুল নেই এমন নয়। পরিশেষে বলব যে, ডগলাস ম্যাকগ্রেগর ৫ টা যে চাহিদার সোপান দিয়েছেন।আমার মতে তার পঞ্চম নম্বরটি – self actualization, যা আমরা জীবনের শুরু থেকে প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে পেতে চাই। এসমস্ত বিশ্লেষণই শেষ কথা নয়, যখন সম্পর্ককে ঘিরে পরিবার গড়ে ওঠে, সেখান থেকেই সমাজ পরিবর্তনের ডাক ওঠে বিভিন্ন পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে এবং নাড়া দেয় রাষ্ট্রকে। তাই চলুন, সুস্থ সংস্কৃতি গড়তে সম্পর্কে সুস্থতা আনি। জীবন নিজেই একটি বড়সড় প্রকল্প, এর পলিসি যেমন হবে কার্যক্রম প্রায় তেমনই হবে। অগ্রগতি? সে তো আমাদের জীবনই বলে দেবে।
সাদিয়া কারিমুন
প্রাক্তন শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ,
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।