রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শন মূলত শিক্ষার মাধ্যমে মানসিক ও আত্মিক স্বাধীনতা অর্জনের ওপর জোর দেয়। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জন নয় বরং মনের স্বাধীনতা ও আত্মার মুক্তি।
১. শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে মনের ও আত্মার স্বাধীনতা: রবীন্দ্রনাথের মতে, শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর মন এবং আত্মার স্বাধীনতা অর্জন, যা তাকে নিজের মতামত প্রকাশ করতে এবং নিজের জীবন পরিচালনা করতে সহায়ক হবে।
২. সর্বজনীন দর্শনের প্রতিফলন: ঠাকুরের শিক্ষাদর্শন একটি সর্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে, যা কেবল একটি জাতি বা সংস্কৃতির জন্য নয় বরং সমগ্র মানবজাতির কল্যাণকে প্রাধান্য দেয়।
৩. শিক্ষার দর্শনের তিনটি মৌলিক লক্ষ্য:
স্বাধীনতা: ব্যক্তি ও সমাজের জন্য মানসিক এবং শারীরিক স্বাধীনতার গুরুত্ব।
সৃষ্টিশীলতা: সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মনোভাব ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা বিকাশ।
স্বতঃপ্রকাশ এবং প্রকৃতি ও মানুষের সাথে সম্পৃক্তি: শিক্ষার্থী যেন নিজের মনের ভাবনা প্রকাশ করতে পারে এবং প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়।
৪. জাতীয় ও সামাজিক সামঞ্জস্য বজায় রাখা: ঠাকুর মনে করতেন, শিক্ষা সমাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলা এবং জাতীয় পরিচয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।
৫. সমগ্রতামূলক শিক্ষা: তাঁর শিক্ষাদর্শন শিশুর শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক বিকাশের সমন্বিতভাবে পরিচর্যার ওপর গুরুত্বারোপ করে, যা সামগ্রিক বিকাশে সহায়ক।
৬. প্রকৃতি-ভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি: শিক্ষার্থীদের প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রকৃতি-ভিত্তিক শিক্ষার ওপর জোর দেন তিনি, যাতে তারা পৃথিবী সম্পর্কে গভীর জ্ঞান লাভ করতে পারে।
৭. মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার: ঠাকুরের মতে, শিক্ষার্থীরা তাদের মাতৃভাষায় শিখলে আরও সহজে ও গভীরভাবে বুঝতে পারে।
৮. ক্রীড়া ও শারীরিক আন্দোলন: শরীর ও মনের বিকাশে খেলাধুলার গুরুত্ব রয়েছে বলে তিনি মনে করতেন।
৯. সৃষ্টিশীল শিক্ষাদান পদ্ধতি: রবীন্দ্রনাথ সৃজনশীল ও আনন্দদায়ক উপায়ে শিক্ষাদানের ওপর জোর দিয়েছেন, যাতে শিক্ষার্থীরা আগ্রহী ও মনোযোগী থাকে।
এগুলি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শনের মূল দিকগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা একটি সমন্বিত ও স্বাধীনতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছে।