মুসলিমবিশ্বে স্বৈরাচারী শাসকদের প্রাদুর্ভাব কেন: ইসলাম কী তবে গণতন্ত্রের প্রতিপক্ষ

ইসলামের গণতন্ত্রবাদী ব্যাখা হবে ধার্মিকতার সাথে অধিকার, বিশ্বাসের সাথে মুক্তি, ও ইসলামের সাথে প্রগতির সম্মেলন। এটা বরং এমন আধুনিকতার জন্ম দিবে যা ইসলাম থেকে অনুপ্রাণিত !

সাজিদ হাসান চৌধুরী 

সাম্প্রতিক সময়ে কাজাখস্তানে ঘটে গেছে ভয়াবহ সরকারবিরোধী দাঙ্গা ও বিক্ষোভ। জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করেই দেশের জনগণের ভেতরে তীব্র গণ-অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছিল। বিক্ষোভ দমন করতে না পেরে শাসকগোষ্ঠীর আমন্ত্রণে রাশিয়ান মিলিটারীর সশস্ত্র  অনুপ্রবেশ ঘটে কাজাখস্তানে, দেশটির সেনাবাহিনী রাজধানী নূর-সুলতানের রাজপথে পাখির মতো গুলি করে মানুষ মেরেছে। 

এরকম শুধু কাজাখস্তানে নয়, সাম্প্রতিক সময়েই মুসলিম অধ্যুষিত আরো কয়েকটি দেশ, যেমন: লেবানন, আফগানিস্তান, তিউনিশিয়া, সুদানে বিক্ষোভ চলছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, মুসলিম অধ্যুষিত এসব রাষ্ট্রে তীব্র গণ-অসন্তোষ থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের স্ফূরণ ঘটলেও,   আন্দোলন দমন করতে সরকারসমূহ বেছে নিচ্ছে নিষ্ঠুর স্বৈরতান্ত্রিক উপায়; হত্যাকান্ড-জেলজুলুমের ভেতর দিয়ে আন্দোলনগুলিকে নিস্প্রভ করে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে শাসকগোষ্ঠীর সমস্ত মেকানিজম। 

এরকম  শুধু যে সাম্প্রতিক সময়েই হচ্ছে তা কিন্তু নয়। বরং এটা অনেকদিন ধরেই  মুসলিম বিশ্বের কমন ফেনোমেনা।

বর্তমানবিশ্বেমুসলিমঅধ্যুষিতরাষ্ট্রেরসংখ্যা৫৭টিরমতো,যারভেতরেঅতিঅল্পকিছুরাষ্ট্রেসরকারব্যবস্থায়গণতান্ত্রিকপদ্ধতিকার্যকর।বেশীরভাগরাষ্ট্রইস্বৈরতান্ত্রিক;জনগণেরআর্থ-সামাজিকঅবস্থারউন্নয়ণে ওসবরাষ্ট্রেরশাসকগোষ্ঠীরতেমনকোনমাথাব্যাথানেই।

এরকম বেশীরভাগ রাষ্ট্রই কার্যত ব্যর্থরাষ্ট্র, তীব্রভাবে দূর্নীতিগ্রস্থ। দারিদ্রসীমার নিচে থাকা বহু  জনগণ এসব রাষ্ট্রে বসবাস করছে। বিশ্বের সবথেকে পিছিয়ে পড়া অনুন্নত ৩০টি রাষ্ট্রের তালিকা করলে নিশ্চিতভাবেই বেশ কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রের নাম তালিকায় মিলবে। বিষয়টি মোটেও কাকতালীয় কোন ঘটনা নয়। বরং অতি গুরুত্বের সাথে এ অবস্থার  প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা  জরুরী। 

মুসলিম সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উপাদান ‘ইসলাম’ ,  মানুষের মনজগতের বাইরেও ইসলাম সমাজের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জগতে প্রভাববিস্তারকারী শক্তি হিসেবে কার্যকর। ‘উপনিবেশিক যুগের পর  মুসলিম বিশ্বের দীর্ঘ স্বৈরতান্ত্রিক বাস্তবতার পেছনে ইসলামের ভূমিকা কতটুকু, কী কারণে মুসলিম বিশ্বের জনগণ  গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না, স্বৈরশাসনের বীজ সমাজে কতখানি শক্তিশালীভাবে প্রোথিত’ – এসব বিষয়ের কারণ অনুসন্ধান হবে এই আর্টিকেলের মূল বিষয়বস্তু। 

স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী পোস্টমর্ডানিজমের যুগে বেশ কয়েকজন থিওরীস্ট এসব প্রশ্নের কারণ অনুসন্ধানের প্রয়াস করেছেন। ওরিয়েন্টালিস্ট, এ্যাপোলজিস্ট প্যারাডাইমের বাইরেও বেশ কয়েকজন ক্রিটিক্যাল থিঙ্কারদের অনুসন্ধানের প্রতি এই আর্টিক্যালে আলোকপাত করা হয়েছে। কিছু থিঙ্কার  বর্তমান আর্থসামাজিক ব্যবস্থা ইসলামের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। ইসলামের মূল টেক্সট কতখানি গণতান্ত্রিক প্রিন্সিপালের সাথে ওভারলেপ করে- এটাও জানার চেষ্টা করা হয়েছে। ইসলামের ভেতরে থেকে গণতান্ত্রিক উত্তরণ কতখানি সম্ভাবনাময় – এটাও জানার চেষ্টা হয়েছে। স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য শাসকগোষ্ঠী যেভাবে ইসলামকে ব্যবহার করছে- তার প্রেক্ষিতে ইসলামের ভবিষ্যত কোনদিকে মোড় নিবে, তা কি আদৌ সামাজিক শক্তি হিসেবে থাকবে কিনা, থাকলেও কতখানি থাকবে- এসব প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করা হয়েছে ।

কিন্তুবেশীরভাগথিওরিস্ট বহিরাগতকোনকারণ,যেমন:নব্য-উপনিবেশবাদ,সাম্রাজ্যবাদইত্যাদিকেকারণহিসেবেদেখাননি,বরংকেবলসমাজেরঅভ্যন্তরীণক্ষেত্রওঐতিহাসিকবাস্তবতার প্রতিআলোকপাতকরেছেন।বিউপনিবেশায়নবাদীএকাডেমিকএডওয়ার্ডসাইদেরওরিয়েন্টালিস্টদেরসমালোচনারক্ষেত্রেইকেবলবহিরাগতকারণদর্শিতহয়েছে।তবেকোনজনপ্রিয়ষড়যন্ত্রতত্ত্বকেওকারণহিসেবেহাজিরকরাহয়নি। 

এবার থিওরীস্টদের পর্যালোচনাসমূহের ভেতরে প্রবেশ করা যাক : 

Bernard Lewis :

ব্রিটিশ-মার্কিন ইতিহাসবিদ Bernard Lewis (d.2018) মনে করেন, গণতন্ত্রের বিপরীতে সর্বাত্মকবাদ বা Totalitarianism হলো ইসলামী বিশ্বাসের স্বত:স্ফূর্ত ফলাফল। কারণ মুসলিম সমাজে যে ‘খিলাফতে’র ধারণা রয়েছে, সেখানে ‘খলিফা’কে পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি (Vice-regent) হিসেবে ভাবা হয় এবং এর ভিত্তিতেই জনগণকে নেতৃত্ব মেনে নিতে আহবান করা হয়। খলিফা যেভাবে ধর্মীয় আইন ব্যাখা করার সুযোগ পান, এতে রাষ্ট্রকে ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের জায়গা থেকে পৃথক ভাবা কঠিন হয়ে পড়ে।  ইসলামের এরকম রাজনৈতিক বোঝাপড়ার কারণে ঐতিহাসিকভাবেই মুসলিম সমাজদর্শনে সাম্য, স্বাধীনতা,  গণতন্ত্র, মুক্তি- এসব ধারণাগুলোর বিকশিত হয়নি । 

কার্যকারণ হিসেবে লুইস দেখিয়েছেন, খ্রীষ্টান সমাজে রোমান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টদের ভেতরে দীর্ঘকালীন সংঘাত ও রক্তপাত ঘটেছিল। এসব সংঘাতের প্রতিক্রিয়ায় ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে মানুষ রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের জায়গা থেকে পৃথক করার কথা ভেবেছিল। মুসলিম সমাজে এধরণের কোন ঐতিহাসিক বাস্তবতা সৃষ্টি হয়নি। অন্যদিকে, ইসলাম ও মুসলিম সমাজে অমুসলিমদের প্রতি এমন  সহনশীলতা ছিল, যার প্রেক্ষিতে ‘ইসলাম’ সমাজে ততখানি অজনপ্রিয় হয়েও উঠেনি। যদিও মুসলিম সমাজে অমুসলিমদের পুরোপুরি সমকক্ষ ভাবা হতো না।

অন্যদিকে,বর্তমানমুসলিমসমাজেকোনপ্রকারপশ্চিমাধ্যানধারণাকেসন্দেহেরনজরেদেখারপ্রচলনআছে।কারণইতিপূর্বেতারানাৎসীবর্ণবাদ,সোভিয়েতমার্কসবাদওতৃতীয়বিশ্বধারণাদ্বারাক্ষতিগ্রস্থহয়েছে।পশ্চিমাদর্শনেরকোনকিছুতেইতাদেরগভীরঅবিশ্বাস।(1) 

Edward Said :

বানার্ড লুইসের সমালোচনায় ফিলিস্তিনী-মার্কিন বি-উপনিবেশায়নবাদী একাডেমিক Edward Said (d.2003) বলেছেন, লুইসের মতো স্কোলাররা আসলে পশ্চিমা একাডেমিকদের বদ্ধমূল চিন্তাধারণা থেকে বের হতে পারেননি। মুসলিম ও আরব সমাজে স্বৈরশাসকদের উত্থানের পেছনে পশ্চিমা একাডেমিকেরা বরাবরই ইসলামের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা সুকৌশলে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের প্রতিক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে যেতে চান। 

এডওয়ার্ড সাঈদ দুটো পয়েন্টে  বানার্ড লুইসদের মতো ওরিয়েন্টালিস্ট বা প্রাচ্যবিদদের সমালোচনা করেছেন । 

  1. ইসলামের সমালোচনা করতে যেয়ে ওরিয়েন্টালিস্টরা কেবল পশ্চিমা একাডেমিকদের লেখাজোকাকেই  উৎস হিসেবে ভ্যালিড বা গ্রহণযোগ্য  মনে করেন। ইসলামের মূল টেক্সটবুক ও ইসলামী ধর্মতাত্ত্বিকদের ব্যাখাকে তারা পাঠ করেন না কিংবা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
  2. মুসলিম সমাজ একক কোন সমপ্রকৃতির সমাজ বা হোমোজেনাস সোসাইটি নয়। বরং ভৌগলিকভাবে বিস্তৃত এবং জনসংখ্যাবহুল একটি সমাজ। পৃথক ঐতিহাসিক বাস্তবতা, ভিন্ন অর্থনৈতিক কারণ, নানা সাংস্কৃতিক সম্মেলন ও  ব্যক্তিত্ব হতে সৃষ্ট চিন্তাধারা এই সমাজকে বৈচিত্র্যমন্ডিত করেছে। তাই স্বৈরতন্ত্রের উত্থানের বৃহৎ কারণ হিসেবে ইসলামকে ভাবা তাত্ত্বিকভাবে ভুল।(2)

Samuel P. Huntington :

এখন আমরা আমেরিকান পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট Samuel P. Huntington (d.2008) এর জনপ্রিয় “Cultural Thesis” নিয়ে আলোচনা করতে পারি । হান্টিনটন দাবি করেছেন, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের মানুষদের মধ্যকার দীর্ঘকাল ধরে চর্চিত সাংস্কৃতিক আবহ, বিশ্বাস ও আচরণ পদ্ধতি গণতন্ত্রের বিকাশে চমৎকার ভূমিকা পালন করেছে। গণতন্ত্র এসব দেশের মানুষদের কাছে অর্গানিক বিষয়। ইউরোপের বাইরে অন্যান্য দেশে গণতন্ত্রের এখনো যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তাও পশ্চিমা জগতের অর্থনৈতিক সাফল্য ও ইউরোপীয় উপনিবেশিক যুগের সাংস্কৃতিক রেঁশ।

অন্যদিকে, সমাজদর্শন হিসেবে কনফুঁসিওবাদ ও ইসলামের সাথে  গণতন্ত্রের সম্পর্ক বিপরীতমুখী ও বৈরী । 

তাত্ত্বিক আলোচনার পাশাপাশি হান্টিনটন বললেন, এই যে দেখেন, স্বৈরশাসন ও একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের পর থেকে  ল্যাটিন আমেরিকা, পূর্ব ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার মানুষেরা যে রাজনৈতিক আন্দোলন করেছে, সেখানে মানুষের মূল মোটিভ হলো গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মুক্তির পাওনা আদায়। 

অন্যদিকে, ঠিক একই সময়ে, মুসলিম বিশ্বে স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে যে রাজনৈতিক আন্দোলন চলেছে, সেখানে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার থেকেও শক্তিশালী বিকল্প হয়ে এসেছে ইসলামী রাষ্ট্রের ধারণা। স্বৈরশাসকদের মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রকামীদের তুলনায় মৌলবাদী ইসলামপন্থীরা সামনের কাতারে থেকে লড়েছে। এসব আন্দোলনকারীদের গণতন্ত্রের প্রতি কমিটমেন্ট সন্দেহযুক্ত। ক্ষমতায় যেতে পারলে তারা গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের তুলনায় ইসলামী শরীয়ত ব্যবস্থা প্রণয়ণে অধিক মনোযোগী হবে।  

তবে, অন্যান্য থিওরীস্টদের তুলনায় হান্টিনটন আলাদা। হান্টিনটন নিজে থেকেই তার থিসিসের দূর্বল পয়েন্ট চিহ্নিত করে গেছেন। একসময় হান্টিনটনের মতো করেই জার্মান সোসিওলজিস্ট  Max Weber (1920) মনে করতেন, রোমান ক্যাথলিক খ্রীষ্টান সমাজে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা দূরহ। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুগে ওয়েবারের থিসিস ভুল প্রমাণিত হয়েছে। অনুরূপ পরিস্থিতি মুসলিম বিশ্বেও সৃষ্টি হলে, Cultural Thesis ভুল প্রমাণিত হওয়া সম্ভব। অনুরূপ পরিস্থিতি বলতে  পাওয়ার স্ট্রাকচারের পরিবর্তন, সাংস্কৃতিক সিনথিসিস, সমাজের বদ্ধমূল ধারণার পরিবর্তন ও সমাজে রাজনৈতিক সচেতনতার বৃদ্ধি ।(3)

Elie Kedourie :

এ পর্যায়ে  ব্রিটিশ হিস্ট্রিয়ান Elie Kedourie (d.1992)  এর “The Thesis of Political Quietism” -এর বয়ানকে সামনে আনা যায়। ক্যাদুরী দেখাচ্ছেন, মুসলিম সমাজে  ‘খিলাফত ও খিলাফতের আসল হকদার কে ?’ – এ বিরোধে দীর্ঘকালীন রাজনৈতিক সংঘাত ও বিফল রক্তপাতের ঐতিহাসিক বাস্তবতা রয়েছে। একের পর এক সংঘটিত বিফল বিদ্রোহ ও পরাজয়ের গ্লানী মাথায় নিয়ে সমাজের একটা বিশাল অংশ রাজনীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখাকে অধিক লাভজনক ভেবেছে। তারা ভেবেছে, সমাজে নৈরাজ্য বিরাজ করার থেকে স্বৈরশাসক অধিক ভালো। তাই ক্ষমতার মসনদে কে বসছে, এ নিয়ে তাদের কোন রায় থাকতো না। তারা নেতৃত্বকে প্রশ্ন না করে নির্দ্বিধায় আনুগত্য স্বীকার করতো। কিন্তু তারা এ পর্যায় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাজনীতি থেকে দূরে থাকাকে ধর্মতত্ত্ব দিয়ে জাস্টিফাই করারও চেষ্টা করে গেছেন। স্বৈরশাসকেরাও ইসলামের নামে চলা এ চিন্তাধারাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। কালক্রমে এই চিন্তাধারা মুসলিম সমাজদর্শনে আজো শক্তিশালীভাবে বিরাজ করছে, শক্তিশালী কিছু ধর্মীয় আন্দোলনও এ চিন্তাধারার প্রসার করছে। 

এ পর্যায়ে এসে মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রযন্ত্র অত্যন্ত শক্তিশালী, এর বিপরীতে জনগণ পেয়েছে দূর্বল সমাজকাঠামো; যাদের সেই সামর্থ্য নেই যে, তারা ক্ষমতাশালী স্বৈরশাসকদের আঙুলী দেখাবে ।(4)  

কিন্তু ক্যাদুরীর এই পর্যালোচনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এই তত্ত্বের বিপরীত পুরাতন উদাহরণ হিসেবে আমরা উনবিংশ শতাব্দীতে সংঘটিত হওয়া ইরানের তামাক বিদ্রোহ ও নতুন উদাহরণ হিসেবে আরব বসন্তের কথা বলতে পারি। এসব আন্দোলন রাজনৈতিক বিমুখতার বিপরীত উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। 

ক্যাদুরীর থিসিসের অন্য আরেকটি সমালোচনা হলো এমন- ক্যাদুরী আসলে এমনসব ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন, যারা আসলে পশ্চিমা প্যারামিটারের গণতন্ত্র দ্বারা পরিচিত ছিল না। ফলে তিনি  মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝতে ভুল করেছিলেন। 

Seymour Martin Lipset :

মার্কিন সোসিওলজিস্ট Seymour Martin Lipset (d.2006) মনে করেন, মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রসমূহে Third Wave of Democracy আসেনি কারণ মুসলিমদের কাছে গণতন্ত্রের মতোই দার্শনিক ও প্রয়োগযোগ্য  বিকল্প ছিল।

কারণ ইসলাম কেবলমাত্র আধ্যাত্মিক বিশ্বাস আর আচারের সমষ্টি নয় বরং ইসলাম কিছু নিয়মনীতি দেখিয়েছে যা দিয়ে সমাজ পরিচালনা করা যায়।আবার ইসলামের ভেতরে মুক্তির (Freedom) ধারণা আছে যা গণতন্ত্রের সাথে আর্দশিকভাবে ওভারলেপ করে। যার জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে ধর্মকে পৃথক করার আর্জেন্সি মুসলিম সমাজের মানুষেরা অনুভব করেনি। (5) 

Esposito & Voll :

ইতালীয়-মার্কিনএকাডেমিকJohn Louis Esposito (B.1940) ওমার্কিনএকাডেমিকJohn Obert Voll (B.1936)বেশগুরুত্বপূর্ণএকটিকাজকরেছেন।উনারাইসলামেরসাথেগণতন্ত্রেরকো-রিলেশনবুঝতেসরাসরিধর্মীয়টেক্সটবুকফলোকরেছেন।আলকুরআনপড়েতারাবুঝেছেন,ইসলামেএমনকিছুপ্রিন্সিপালরয়েছেযাগণতন্ত্রেরপ্রিন্সিপালেরসাথেদারুনভাবেসামন্জস্যপূর্ণ। 

যেমন: প্রথম প্রিন্সিপালটি হলো “তাওহীদ” বা একত্ববাদের ধারণা। তাওহীদ মতে, ইসলামে একমাত্র সার্বভৌম সত্তা হলো আল্লাহ। রাজা বা খলিফা যাই হোক না কেন, তারা সার্বভৌম কেউ নন। তারাও সাধারণ মানুষদের মতো মানুষ, যাদের প্রশ্নাতীত আনুগত্য করার ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নেই। এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে, এ্যাসপসিতো ও ভলের মতো  একাডেমিকেরা ইসলামে নৈতিক গণতন্ত্রের (Moral Democracy) সম্ভাবনা দেখেন। কারণ, তাওহীদের কনসেপ্ট রাজনৈতিক পরিমন্ডলে সমতার ধারণাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে, যা কিনা বৈপ্লবিকভাবে আগ্রাসী স্বৈরশাসকের মূলোৎপাটনের জন্য  শক্তিশালী নৈতিক বৈধতা  তৈরী করে। 

আরেকটি প্রিন্সিপাল হলো, “খিলাফাহ” বা প্রতিনিধিত্বের ধারণা। যুগ যুগ ধরে এ ধারণাকে ম্যানিপুলেট করে ট্রাডিশনালিস্টরা রাজতন্ত্র, স্বৈরশাসকের বৈধতা ও প্রশ্নাতীত আনুগত্যকে জাস্টিফাই করে এসেছে। 

কিন্তু কুরআনের কনটেক্স বা প্রাসঙ্গিকতা অনুসারে, এ ধারণা সুপ্রতিষ্ঠিত করে যে, প্রতিটি মানুষ আসলে পৃথিবীতে আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি, মানুষের মর্যাদা সমান। পূর্বে শাসক ও পুরোহিতশ্রেনী যেমন নিজেদেরকে খোদার প্রতিনিধি বা বংশধর দাবি করতো। আল কুরআন পূর্বের সেই ফন্দি-ফিকিরকে নাখোচ করেছে। 

প্রতিটি মানুষ স্বাধীন, স্বাধীনভাবে আল্লাহর প্রতিনিধি; ঠিক যেমন অন্য আরেকজন মানুষ। তার উপরও অন্য আরেকজন মানুষের মতোই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব বর্তায়; অধিকার রয়েছে মতপ্রকাশের- সে কীভাবে সমাজকে চালিত করতে চায়। 

এই দায়িত্ব সে পালন করতে পারে শূরা  ( আলোচনা / Consultation), ইজমা (ঐক্যমত/Consensus) ও ইজতিহাদের (স্বাধীন বিচার/Independent Imperative Judgement) এর মাধ্যমে।(6)   

ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট সংস্কারপন্থী Seyyed Mohammad Khatami  আমেরিকান মিডিয়া CNN- এর কাছে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন , ইরানের ইসলামী বিপ্লবের দুটো সুস্পস্ট মোটিভ ছিল এবং থাকবে। প্রথমটি হলো: ধর্মের এমন ব্যাখা যা ধার্মিকতা ও মানুষের মুক্তির ধারণাকে সমন্বয় করে; দ্বিতীয়টি হলো: জাতীয় স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করা। 

প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হিসেবে তিনি আমেরিকার ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে টেনে আনেন- আমেরিকা স্বাধীনতা আন্দোলন কীভাবে ধর্ম-নৈতিকতা দ্বারা প্রভাবিত ছিল!

এভাবে তিনি বুঝান, ধর্ম ও রাষ্ট্র যুগপৎভাবে Effective Democracy (কার্যকরী গণতন্ত্র) হয়ে উঠতে পারে। এমন উদাহরণ  ইরানের বাইরে বর্তমানে অন্যকোথাও না থাকলেও, উদাহরণ সৃষ্টির জন্য পৃথিবীকে সময় দিতে হবে ।*  

Shmuel Noah Eisenstadt :

ওয়েস্টার্ন চিন্তকদের বদ্ধমূল ধারণা হলো, ‘গণতন্ত্রকে পুরোপুরি ধর্মবিবর্জিত হতে হবে  এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি হলো মর্ডানিটি বা আধুনিকতার মানদন্ড।   

ইসরাঈলী সোসিওলজিস্ট Shmuel Noah Eisenstadt (d.2010) এর ধারণার প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন ও সমালোচনা করে গেছেন। তিনি ইউরোপ ও পশ্চিমাদের আধুনিকতার ধারণাকে চূড়ান্ত(pinnacle) ও আদর্শ(Standard) হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

তিনিবলেছেন,প্রতিটিসমাজযেহেতুপৃথকসাংস্কৃতিকধারণা,ঐতিহ্যওঐতিহাসিকঅভিজ্ঞতামেনেসমৃদ্ধিপথেএগিয়েযায়,সেহেতুমুসলিমসমাজগুলোকেগণতান্ত্রিকওমুক্তিসংগ্রামেরঅনুপ্রেরণারজন্যপশ্চিমেরদিকেমুখিয়েথাকারপ্রয়োজনীয়তানেই।পশ্চিমকখনোইগণতন্ত্রওমুক্তিরপরিমাপকনয়।মুসলিমসমাজেতাদেরমতোকরেইগণতন্ত্রআসাজরুরী।(7) 

Asef Bayat: 

উপরের অবস্থানসমূহের বাইরে ইরানী মার্কিন একাডেমিক Asef Bayat (b.1954) খুব গুরুত্বপূর্ণ থিসিস নিয়ে এসেছেন- “Post Islamism” ; থিসিসের প্রস্তাবনা অনুসারে Post Islamism একই সাথে পরিস্থিতি, আবার রূপকল্প । 

  তিনি মনে করেন, মুসলিম সমাজে স্বৈরশাসকদের উত্থানের পেছনে কিংবা মুসলিম জনগণের গণতন্ত্রের পক্ষে   ঝুঁকে পড়ার পেছনে তাত্ত্বিক দিক থেকে ইসলামের ভূমিকা গৌণ;  বরং মুসলিম সমাজের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের পথটি হলো গণতন্ত্র। 

ইসলামের টেক্সট নির্ভর ব্যাখাকে গৌণ বা সেকেন্ডারী হিসেবে দেখানোর পেছনে  আসেফ বায়াতের যুক্তি হলো:

“কুরআনকীবলছে”এটিরচেয়েগুরুত্বপূর্ণপ্রশ্নহলোকারাকীউদ্দেশ্যেকুরআনকেব্যাখাকরছে!

বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য গণতন্ত্র  বিভিন্ন আসপেক্টে  মুসলিম জনগণের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে; এবং এরফলে ইসলামের এমন ব্যাখা যা গণতন্ত্রের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ তা ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে ।  

‘আল কায়েদা’র মতো সন্ত্রাসবাদী ইসলামী দলগুলোর উত্থানের জন্য তিনি মনে করেন, প্রথমদিকে সুযোগ প্রাপ্তি ও পরবর্তীতে নির্যাতিত হলে জনগণের ভেতরে সৃষ্ট সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে- উভয় বিপরীতমুখী প্রক্রিয়াতে এ দলগুলো সমাজে কিছুমাত্রায় ভিত্তিমূল গড়েছে। 

সমাজে খনিজ সম্পদ বা তেলবিক্রির অর্থের আগমন, শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, সমাজে সহজেই মোবিলাইজ করার সুযোগের বিপরীতে শাসকশ্রেণীর হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে পড়া, বিদ্যমান রাজনৈতিক নিপীড়ন, দূর্নীতিগ্রস্থ ব্যবস্থায় কারণে বৈষম্য ছড়িয়ে পড়ায়  সন্ত্রাসবাদী দলগুলোর উত্থান ঘটেছে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদী দলগুলো লক্ষ্য অর্জনের জন্য যতখানি জনসমর্থণ প্রয়োজন তা তারা অর্জন করতে পারেনি । ফলে এ সন্ত্রাসবাদী কৌশল লংরানে ব্যর্থ হবে। 

স্বৈরশাসনের  পতন ঘটাতে এ দলগুলোর ব্যর্থতার পর যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা হলো Post Islamism; তখন মুসলিম সমাজে গণতন্ত্রের আবেদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে  এবং ইসলাম জনগণের কাছে নিজের আবেদন রক্ষার্থে গণতন্ত্রবাদী ব্যাখা গ্রহণ করবে। 

ইসলামেরগণতন্ত্রবাদীব্যাখাহবেধার্মিকতারসাথেঅধিকার,বিশ্বাসেরসাথেমুক্তি,ওইসলামেরসাথেপ্রগতিরসম্মেলন।এটাবরংএমনআধুনিকতারজন্মদিবেযাইসলামথেকেঅনুপ্রাণিত !(8) 

অনেক ধর্মপ্রচারকের মুখে শুনে থাকবেন, তারা গণতন্ত্রকে ইসলামবিরোধী হিসেবে প্রচার করতে চান। এজন্য জনমহলে অনেক সময়ই ইসলামকে গণতন্ত্রের প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবা হয়। ইসলামকে স্বৈরশাসকেরা এক দীর্ঘকাল যাবত রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এসেছেন –

ইসলামকে কীভাবে এতোদিন স্বৈরশাসকেরা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে- এ বিষয়ক ইতিহাস তুলে ধরেছেন  এশিয়ার রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ Kunal Mukherjee . পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করে তিনি দেখিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলো  ইসলামপন্থী ভোটারব্লক তৈরী করতে সক্ষম হলেও  দিনশেষে তার ফল ভোগ করেছে স্বৈরশাসকেরা। একাধিক স্বৈরশাসক যেমন: ইয়াহিয়া খান, জিয়াউল হক, শরীফ, পারভেজ মোশাররফ- যখনই রাজনৈতিক বৈধতা বা লেজিটিম্যাসীর সংকটে পড়েছে, তখন তারা সে সংকট থেকে নিষ্কৃতি পেতে ও জনগণের নজর অন্যদিকে ফেরাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামিকীকরণ এবং ইসলামী আইন প্রণয়নের দিকে ঝুঁকেছিল ।(9) 

ঠিক একইভাবে সোসিওলজিস্ট Mansoor Moaddel এবং Abdul-Hamid Abdul-Latif  দেখিয়েছেন, ১৯৬০-এর দশকে যখন মরক্কোর রাজতান্ত্রিক শাসন বামপন্থীদের চ্যালেন্জের মুখে পড়ে, তখন মরক্কোর রাজা ইসলামপন্থী দলগুলিকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল  বামপন্থীদের বিরুদ্ধে সহযোগীতা পেতে।  এভাবে বেশ কিছু দেশে, ইসলামপন্থী দলগুলো স্বৈরাচারী শাসকদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।(10)  

এবার আমরা সেসব গবেষকের মতামত শুনবো যারা পূর্বানুমান ব্যতিরেকে সরাসরি সাধারণ মুসলিমদের পারসেপশন বা মতামতের উপর সার্ভে করেছেন: 

তুর্কিশ বংশোদ্ভূত একাডেমিক Sabri Ciftci  মধ্য এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত ১০ টি রাষ্ট্রের জনগণের উপর গবেষণা করে যেসব ফাইন্ডিংস পেয়েছেন: 

      স্বৈরশাসন বা Authoritarian শাসকদের অধীনে নিষ্পেষিত Non-elite নাগরিকেরা গণতন্ত্রের প্রতি ভীষণমাত্রায় আগ্রহী।  

   শুধুমাত্র ধর্মীয়কারণে  মানুষ গণতন্ত্রের বিরোধীতা করছে, এমন কোন পারসেপশন তেমনভাবে এসব দেশে আসলে নেই।   ধার্মিক মুসলিমেরা একইসাথে গণতন্ত্রের কঠোর সমর্থক হতে পারে। কেউ ইসলামী শরীয়তি আইনের সমর্থক মানে, সে যে গণতন্ত্রের বিপরীতে থিওক্রেসী বা মোল্লাতন্ত্রের সমর্থক হবে এমনটি সরলভাবে বলা যায় না। (11)

 আমেরিকান পলিটিক্যাল সায়েন্টিন্ট Richard Rose (b.1933) মধ্য-এশিয়ার দুটো মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র কাজাখস্তান ও কিরগিজস্তানের মানুষদের উপর গবেষণা করেছেন। 

উনার গবেষণার ফাইন্ডিংস হলো,

গণতন্ত্রেরপ্রশ্নেসাধারণমুসলিম,অর্থোডক্সখ্রীষ্টানওঅবিশ্বাসীনাস্তিকদেরমধ্যেকোনগুণগতপার্থক্যনেই।

অধার্মিক মুসলিমদের পাশাপাশি ধার্মিক মুসলিমরাও একই রেসিওতে গণতন্ত্রের সমর্থণ করছে।  

 দেশ দুটির মানুষের রাজনৈতিক মূল্যবোধের পার্থক্য ধর্ম ও জাতিসত্তার তুলনায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, বয়স ও শিক্ষার তারতম্যের উপর অধিক নির্ভর করছে।(12) 

তেমনিভাবে লেখক ও গবেষক Mark Tessler – এর মতে, ইসলামের প্রতি মানুষের ঝোঁক ও আসক্তি  গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরীতে অতিঅল্প প্রভাব রাখে। (13)

দেখতে পাচ্ছি , 

মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রসমূহে স্বৈরাচারী শাসকদের উত্থানের পেছনে ধর্ম ও জীবনদর্শন হিসেবে ইসলামের ভূমিকা কতটুকু- তা ব্যাখা করতে উপরোক্ত থিওরীস্টদের দীর্ঘ পর্যালোচনা রয়েছে। সকল থিওরীস্ট বিভিন্ন ডাইমেনশান থেকে সমস্যাটির কারণ ও গুরুত্ব উপলব্ধির চেষ্টা করেছেন। হতে পারে মানুষের মুক্তি-স্বাধীনতাকে শৃঙ্খলবদ্ধ রাখতে ক্ষেত্রবিশেষে কিংবা একইসাথে বিভিন্ন কারণ কার্যকর। তবে  প্রতীয়মান হয় যে, এটা নেহায়েত কোন কাকতালীয় ঘটনা  নয়। প্রথমত, ইসলামকে শুধুমাত্র আচারসর্বস্ব ধর্ম হিসেবে না দেখে এটা দেখা জরুরী যে, মুভমেন্ট হিসেবে ইসলাম রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আধ্যাত্মিক ও সমাজদর্শনের পরিসরে কতখানি পৃথক বিনির্মাণ করেছে! পৃথক নতুন সভ্যতা গঠনে ইসলামের ভূমিকা কতটুকু এবং এখনো তার রেশ কতখানি মনুষ্যজগতে কার্যকর। 

বিভিন্ন থিওরী আসলে নতুন নতুন চিন্তার ক্ষেত্র ও চিন্তাকৌশল আমাদের সামনে হাজির করেছে। হতে পারে ভিন্ন কনটেক্সে ভিন্ন থিওরী কার্যকর বা এপ্লিকেবল হবে। তবে থিওরীগুলো সমস্যা অনুধাবন ও সমাধান নিরূপনের জন্য  বিভিন্ন পথ দেখিয়ে দিচ্ছে। 

পরিশেষে, এ আর্টিকেলের উদ্দেশ্য কখনো উপসংহার টানা নয়, বরং ‘মুসলিম সমাজের সার্বিক প্রগতির জন্য কোন রাজনৈতিক ফ্রেমওয়ার্কটি অধিক উপযোগী ‘-  তা উপলব্ধির জন্য আরো অধিক পাঠ জরুরী । 

{এটি কোন মৌলিক রিসার্চওয়ার্ক নয়। বরং Dublin City University-র রিসার্চার ‘Tom Moylan’ -এর গবেষণাপত্রের (Critically Assessing the Role of Islam in Authoritarian Contexts) উপর ভিত্তি করে Jahangirnagar University-এর Postgraduate Student ‘সাজিদ হাসান চৌধুরী’র সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা। কোন উচ্চতর গবেষণার জন্য রেফারেন্স হিসেবে পর্যালোচনাটি গ্রহণযোগ্য নয়।} 

References

 * CNN. 1998. Transcript of Interview with Iranian President Mohammad Khatami [Online] . Available from: http://edition.cnn.com/WORLD/9801/07/iran/interview.html[Accessed : 21 March 2013 ]. 

(1) Lewis , B. 1990. The Roots of Muslim Rage [Online] . Available from: http://www.theatlantic.com/magazine/archive/1990/09/the-roots-of-muslim-rage/304643/ [Accessed 22 March 2013 ]. 

(2) Said, E. 2000. Reflections on Exile and Other Literary and Cultural Essays. London: Granta Publications. 

(3) Huntington, S. 1993. The Third Wave : Democratization in the Late Twentieth Century. Oklahoma: University of Oklahoma. 

(4) Kedourie, E.1994. Democracy and Arab Political Culture. London: Frank Cass & Co. 

(5) Lipset,S. 1993. The Social Requisites of Democracy Revisited . American Sociological Review, 59(1),pp.1-22. 

(6) Esposito ,J and Voll,J. 1996 . Islam and Democracy . Oxford: Oxford University Press. 

(7) Eisenstadt,S.2000. Multiple Modernities. Daedalus, 129(1) , pp. 1-29. 

(8) Bayat , A. 2007. Making Islam Democratic: Social Movements and the Post-Islamist Turn . Stanford: Stanford University Press. 

(9) Mukherjee, K. 2010. Islamic Revivalism and Politics in Contemporary Pakistan .Journal of Developing Studies, 26(3),pp. 329-353. 

(10) Abdul-Latif , A. and Moaddel, M. 2007. Events and Value Change : The Impact of September 11,2001 on the Worldviews of Egyptians and Moroccans .IN: Moaddel,M. (ed.) Values and Perceptions of the Islamic and Middle Eastern Publics. New York: Palgrave MacMillan. 

(11) Ciftci, S. 2010. Modernization , Islam ,or Social Capital : What Explains Attitudes Toward Democracy in the Muslim World? Comparative Political Studies,43(11) ,pp. 1442-1470. 

(12) Rose, R. 2002. How Muslims View Democracy: Evidence from Central Asia.Journal of Democracy, 13(4) ,pp. 102-111. 

(13) Tessler ,M.2007. Do Islamic Orientations Influence Attitudes Toward Democracy in the Arab World ? Evidence from Egypt , Jordan , Morocco ,and Algeria. IN: Moaddel,M. (ed.) Values and Perceptions of the Islamic and Middle Eastern Publics. New York: Palgrave MacMillan. 

Writing is not a view of the School of Thought, it is entirely the opinion of the Author.

If you want to share your thought, you can mail us at- editor.sot@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *