পলিটিকাল ম্যাস মিডিয়া: একটি গ্লোবাল দৃষ্টিকোণ

পলিটিকাল বাইস বা রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব mass media-এর মধ্যে একটি দীর্ঘকালীন ও ব্যাপকভাবে আলোচিত বিষয়। মিডিয়া সাধারণত জনগণের মধ্যে বিভিন্ন খবর, মতামত ও বিশ্লেষণ প্রচার করে, এবং এর মাধ্যমে সমাজের একটি নির্দিষ্ট অংশের প্রতি প্রভাব সৃষ্টি করে। কিন্তু যখন মিডিয়া কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ বা আদর্শকে অতিরিক্ত প্রচার করে, তখন সেটি পলিটিকাল বাইস বা রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব হিসেবে গণ্য হয়। এই পক্ষপাতিত্ব কখনো কখনো সচেতনভাবে, আবার কখনো অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়, তবে এর প্রভাব সমাজের ওপর ব্যাপক হতে পারে। বিশেষ করে গণমাধ্যমের সামর্থ্য হলো জনগণের মনোভাব গঠন এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে, যা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা পলিটিকাল বাইস-এর প্রভাব, তার উদাহরণ, এবং কীভাবে এটি গ্লোবাল পর্যায়ে কাজ করে, তা আলোচনা করব।

পলিটিকাল বাইস: সংজ্ঞা এবং এর তাৎপর্য

পলিটিকাল বাইস হল সেই প্রবণতা, যেখানে সংবাদ বা সাংবাদিকতা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের, মতবাদ বা আদর্শের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখায়। এর ফলে, সংবাদ পরিবেশন কেবলমাত্র একপেশে বা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পদ্ধতির প্রাধান্য দেয়। এ ধরনের পক্ষপাতিত্ব শুধু সংবাদে নয়, বিজ্ঞাপন, টক শো, ডকুমেন্টারি, এবং অন্যান্য মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেও প্রতিফলিত হতে পারে। এটি সরাসরি জনগণের চিন্তা-ভাবনা এবং রাজনৈতিক আদর্শের গঠন করতে পারে, যা গণতান্ত্রিক সমাজে চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করে।

পলিটিকাল বাইসের কারণ

১. মালিকানা ও কন্ট্রোল: অধিকাংশ গণমাধ্যম কোম্পানির মালিকানা কিছু বিশেষ ব্যক্তি বা দল হাতে থাকে। এই মালিকরা তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে সংবাদ প্রকাশ করতে পারেন, যা মিডিয়ার পক্ষপাতিত্বকে উস্কে দেয়। বিশেষ করে, যখন সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা অনলাইন মিডিয়ার মালিকরা সরকার বা রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্কিত হন, তখন তা রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের সৃষ্টি করে।

২. সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত মতামত: সাংবাদিকদেরও তাদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বা সামাজিক মতামত থাকতে পারে। কখনো কখনো তাদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা অনুপ্রেরণা তাদের পেশাগত কাজকে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন, যদি কোনো সাংবাদিক একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখান, তাহলে তার প্রতিবেদনও পক্ষপাতমূলক হয়ে উঠতে পারে।

৩. বাণিজ্যিক লাভ এবং দর্শকদের প্রতি দৃষ্টি: গণমাধ্যমের একটি বড় উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থ উপার্জন। তাই অনেক সংবাদপত্র বা টেলিভিশন চ্যানেল তাদের দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইস্যুগুলো একপেশেভাবে উপস্থাপন করে। রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্বের মাধ্যমে তারা মানুষের আগ্রহ ও সমর্থন বাড়াতে পারে, যা তাদের লাভজনক হয়ে ওঠে।

গ্লোবাল উদাহরণ: পলিটিকাল বাইস

১. যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মিডিয়ার ভূমিকা: ২০১৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা একটি বড় বিতর্কের বিষয় ছিল। বিশেষ করে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সময়, কিছু সংবাদ মাধ্যম যেমন, ফক্স নিউজ এবং এনবিসি নিউজ, তার প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ পেয়েছিল। ফক্স নিউজ-এর কিছু রিপোর্ট এবং আলোচনা সভা ট্রাম্পের প্রচারণাকে সমর্থন করেছিল, যা তাকে জনপ্রিয়তা অর্জনে সহায়তা করেছিল। অন্যদিকে, সিএনএন এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস ট্রাম্পের সমালোচনায় বেশি যুক্ত ছিল। এসব কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় গণমাধ্যমের পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং জনগণের মনোভাবের ওপর তার প্রভাব ছিল ব্যাপক।

২. ব্রেক্সিট (Brexit) গণভোট: ২০১৬ সালে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) ত্যাগের প্রশ্নে অনুষ্ঠিত গণভোট, ব্রেক্সিটের সময়ও গণমাধ্যমের পক্ষপাতিত্ব বিষয়টি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। কিছু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে ডেইলি মেইল এবং দ্য সান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার পক্ষে সমর্থন জানিয়ে প্রচার চালিয়েছিল। অন্যদিকে, দ্য গার্ডিয়ান এবং বিবিসি যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ছিল, তেমনি তাদের প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে পক্ষপাতিত্ব ছিল। গণমাধ্যমের এই ধরনের পক্ষপাতিত্ব সাধারণ জনগণের ভোটদানের সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলেছিল।

পলিটিকাল বাইসের প্রভাব

পলিটিকাল বাইস সমাজে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। এটি জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে তীব্র করে তোলে। কিছু জনগণ হয়তো কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে বেশি পক্ষপাতিত্ব দেখে তাদের মতামত পরিবর্তন করতে পারে, যা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। একইভাবে, যখন জনগণ একপেশে সংবাদ গ্রহণ করে, তারা সঠিক তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে তাদের সিদ্ধান্তগুলি অযৌক্তিক এবং পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে ওঠে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দেয়।

পলিটিকাল বাইস মোকাবেলা করার উপায়

১. সাংবাদিকতার নৈতিকতা: সাংবাদিকদের পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই ন্যায্য এবং সঠিকভাবে সংবাদ প্রদান করা উচিত। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে সত্য এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া, যা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সহায়ক হবে।

২. মালিকানা ও সম্পাদনা নীতি: গণমাধ্যমের মালিকানা ও সম্পাদনা নীতির স্বচ্ছতা বজায় রাখা প্রয়োজন। এটি সাহায্য করবে গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষা করতে।

৩. মিডিয়া ফ্যাক্ট-চেকিং: গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করতে ফ্যাক্ট-চেকিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশের পরিণতি গভীর হতে পারে, তাই সাংবাদিকদের উচিত তথ্য যাচাই করে সংবাদ পরিবেশন করা।

উপসংহার

পলিটিকাল বাইস বা রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব গণমাধ্যমের একটি বড় সমস্যা, যা সমাজের মনোভাব এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এটি গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে, সাংবাদিকতার নৈতিকতা, মালিকানার স্বচ্ছতা এবং সঠিক তথ্য প্রদান নিশ্চিত করে এই সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব। গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে সঠিক, নিরপেক্ষ এবং প্রাসঙ্গিক সংবাদ পরিবেশন করার মাধ্যমে, একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং তথ্যভিত্তিক সমাজ গঠন করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *