তন্ত্র (Sanskrit: तंत्र) একটি বৈদিক শাস্ত্রীয় পাঠ্য ও ধর্মীয় ব্যবস্থাপনা, যা মূলত হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রথা, আচার এবং আধ্যাত্মিক রীতির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। তন্ত্র শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ভাষার “তন” (tan) শব্দ থেকে, যার অর্থ “প্রসারিত করা” বা “বিস্তৃত করা”। তন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের আত্মিক বিকাশ ও মুক্তির প্রক্রিয়া বোঝানো হয়। এটি মূলত আধ্যাত্মিক সাধনার একটি পদ্ধতি, যা দেবতাদের সঙ্গে সংযোগ, শক্তির উৎস ও আত্মার মুক্তির জন্য ব্যবহৃত হয়।
তন্ত্রের সঙ্গা
তন্ত্র মূলত একটি আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক শাস্ত্র। এটি এমন একটি শাস্ত্র যা ঋষি-মুনি, গুরু বা আধ্যাত্মিক শিক্ষক দ্বারা নির্দিষ্ট আচার, ধর্মীয় পদ্ধতি, মন্ত্র ও জ্ঞান থেকে আত্ম-উন্নতি অর্জনের পদ্ধতি হিসেবে গৃহীত হয়। তন্ত্রের একাধিক শাখা রয়েছে, যার মধ্যে শাক্ত তন্ত্র, শৈব তন্ত্র, এবং বৌদ্ধ তন্ত্র প্রাধান্য পায়। শাক্ত তন্ত্রে দেবী শক্তির পূজা করা হয়, শৈব তন্ত্রে শিবের পূজা, এবং বৌদ্ধ তন্ত্রে বুদ্ধ বা তার অনুগামীদের পূজা করা হয়।
তন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য হলো আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন, যা সাধককে আধ্যাত্মিকতার পথে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় এবং তাকে জীবনের গতি, লক্ষ্য এবং অতীন্দ্রিয় শক্তির উপলব্ধি দেয়। তন্ত্র সাধনার মাধ্যমে সাধক তার মনের অস্থিরতা, মায়া এবং সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে উঠে শাশ্বত জ্ঞানের পথে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
তন্ত্রের অর্থ ও তাৎপর্য
তন্ত্রের অর্থ অনেক গভীর এবং বিভিন্ন দার্শনিক স্তরে তা ব্যাখ্যা করা যায়। “তন্ত্র” শব্দের মূল অর্থ হল “ধারক” বা “নির্দেশক শাস্ত্র”, যা কোনো নির্দিষ্ট আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় সাধনা বা গুরুর কাছ থেকে শিষ্যের কাছে প্রতিস্থাপিত হয়। তন্ত্রের মূল কাজ হল সঠিক পদ্ধতির মাধ্যমে আত্মার মুক্তি এবং আধ্যাত্মিক উজ্জীবন ঘটানো। এটি শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক চর্চা নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ। তন্ত্রের মাধ্যমে সাধকরা শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক শক্তির মাঝে একত্রিত হয়ে স্রষ্টার সাথে একাত্ম হওয়ার চেষ্টায় থাকে।
তন্ত্রের মধ্যে এমন কিছু বিশেষ শব্দ ব্যবহার করা হয়, যেমন মন্ত্র, ইঙ্গিত বা ইশারা, তন্ত্র সাধনা ইত্যাদি। তন্ত্র সাধনার বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও মন্ত্রকে মন্ত্রজপ, মুখমুদ্রা, ধ্যান, পূজা, হোম এবং তান্ত্রিক যন্ত্র বা মার্জনা হিসেবে পরিচিত। এই সমস্ত উপাদান সাধকের আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং শক্তির সাধনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
তন্ত্রের বিভিন্ন শাখা
তন্ত্রের মূলধারা বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত। কিছু গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো:
1. শাক্ত তন্ত্র: এটি শাক্ত ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং মূলত দেবী শক্তির পূজা ও সাধনা বিষয়ক তন্ত্র। এতে দেবী বা শক্তি কে কেন্দ্র করে আধ্যাত্মিক সাধনা করা হয়। সাধারণত মায়ের পূজা, মাতৃকাবন্ধন, যোগ-তন্ত্র এবং শক্তির সাধনা এই শাখায় অন্তর্ভুক্ত।
2. শৈব তন্ত্র: এটি শিবের পূজা এবং তার সাথে সম্পর্কিত আধ্যাত্মিক পদ্ধতিগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এখানে শিব বা শিব শক্তি কে কেন্দ্র করে সাধনা করা হয়। শৈব তন্ত্রের মধ্যে শিবের মূর্তি বা নিরাকার রূপে পূজা এবং ধ্যানের মাধ্যমে আত্মার মুক্তি লাভের চেষ্টা করা হয়।
3. বৌদ্ধ তন্ত্র: এটি বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত তন্ত্র, যা বৌদ্ধ মন্ত্র, তান্ত্রিক যন্ত্র এবং আধ্যাত্মিক সাধনার পদ্ধতিতে আস্থা রাখে। বৌদ্ধ তন্ত্রে মূলত বুদ্ধ বা তার বোধিসত্ত্বদের পূজা ও ধ্যান করা হয়। এই শাখায় তন্ত্র সাধনার উদ্দেশ্য বুদ্ধত্ব লাভ।
4. জৈন তন্ত্র: জৈন ধর্মেও তন্ত্রের প্রচলন রয়েছে, যেখানে জীবনের অতীন্দ্রিয় জ্ঞান এবং দুঃখ মুক্তির জন্য আধ্যাত্মিক সাধনা করা হয়।
তন্ত্র সাধনা ও তার পদ্ধতি
তন্ত্র সাধনা মূলত নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে করা হয়, যা কিছু বিশেষ প্রক্রিয়া এবং আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মিক উন্নতি সাধন করতে সহায়তা করে। সাধনার কয়েকটি ধাপ নিম্নরূপ:
মন্ত্রজপ (Mantra): এটি একটি বিশেষ ধ্বনি বা শব্দ যা পুনরাবৃত্তি করার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করা হয়। মন্ত্র সাধনা দ্বারা ব্যক্তি তার মনের অস্থিরতা দূর করতে পারে এবং শক্তির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়।
যোগাভ্যাস (Yoga): যোগমার্গ তন্ত্র সাধনার অপরিহার্য অংশ। এখানে শরীর, মন এবং আত্মার সংযোগ স্থাপন করা হয়।
পূজা ও আচার: তন্ত্র সাধনায় পূজা এবং আচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধকরা বিশেষ মন্ত্র ও মুখমুদ্রা (মুদ্রা) দিয়ে পূজা করে এবং আধ্যাত্মিক শক্তির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করে।
মূর্তি পূজা ও ধ্যান: তন্ত্র সাধনার অন্তর্গত ধ্যান এবং মূর্তিপূজা এমন একটি মাধ্যম, যা সাধককে অন্তর্দৃষ্টি ও আত্মজ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে।
তন্ত্রের উদ্দেশ্য
তন্ত্র সাধনার প্রধান উদ্দেশ্য হলো আত্মিক উন্নতি ও মুক্তি লাভ। তন্ত্রের মাধ্যমে একদিকে যেখানে আধ্যাত্মিক শক্তির সংযোগ সাধিত হয়, সেখানে অন্যদিকে এটি জীবনের সকল বাধা, দুঃখ ও অস্থিরতার উত্তরণেও সহায়তা করে। তন্ত্র সাধনা সাধককে তার অন্তরের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার, জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য উপলব্ধি করার এবং আত্মজ্ঞানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়।
তন্ত্রের প্রধান নীতিবিদ্যাগত ধারণা বা বৈশিষ্ট্য
তন্ত্র একটি প্রাচীন ভারতীয় আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় দর্শন, যা মূলত মানবাত্মার মুক্তি, চেতনার উজ্জীবন ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য বিভিন্ন শাস্ত্র ও আচার অনুসরণ করে। তন্ত্রের প্রধান নীতিবিদ্যাগত ধারণাগুলি মূলত জ্ঞানের গভীরতা, আধ্যাত্মিক অভ্যাস, এবং চেতনাগত পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এখানে তন্ত্রের প্রধান ১৫টি বৈশিষ্ট্য বা নীতিবিদ্যাগত ধারণা নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. আধ্যাত্মিক চেতনাবৃদ্ধি
তন্ত্রের মূল লক্ষ্য হল চেতনাকে উন্নত করা এবং সেই মাধ্যমে আধ্যাত্মিক মুক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়া। এটি ব্যক্তির আত্মার প্রকৃত অবস্থানকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে, যার মাধ্যমে সে আলাদা হওয়ার অনুভূতি ছাড়তে পারে। তন্ত্রের মাধ্যমে মনের গভীরে ঢুকে আত্মসাক্ষাত বা পরম সত্ত্বার সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করা হয়।
২. দ্বৈততার অতিক্রম
তন্ত্রের নীতিবিদ্যায় দ্বৈততার ধারণা (যেমন পুরুষ ও নারী, পুণ্য ও পাপ, জ্ঞান ও অজ্ঞতা) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তন্ত্র অনুসারে, এই দ্বৈততাকে অতিক্রম করতে হবে। অর্থাৎ, সমস্ত দ্বৈততা একত্বের মধ্যে মিশে যায়। তন্ত্রে “শিব-শক্তি” বা পুরুষ-প্রকৃতি একে অপরকে পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত হয়।
৩. শক্তির ব্যবহার ও জ্ঞান
তন্ত্রে শক্তির পুঞ্জীকরণ ও সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মার মুক্তি অর্জন করা সম্ভব। তন্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী, শক্তি (শক্তি বা ‘শক্তি’) শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক জ্ঞান বা সৎ পথে ব্যবহৃত হওয়া উচিত। এই শক্তি মন, শরীর ও চেতনার মাধ্যমে কার্যকর হতে পারে।
৪. যোগ এবং মন্ত্রপাঠ
তন্ত্রের একটি প্রধান অংশ হল যোগ এবং মন্ত্রপাঠ। যোগের মাধ্যমে মন ও শরীরের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা হয় এবং মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে সেই শক্তির মুক্তি ঘটানো হয়। মন্ত্রের মধ্যে বিশেষ ধরনের আওয়াজ বা ধ্বনি থাকে যা আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ ঘটায়।
৫. শান্তি ও সমাধি লাভ
তন্ত্রের মাধ্যমে ব্যক্তি শান্তি এবং সমাধি অর্জন করতে পারে। একাগ্রতা এবং ধ্যানের মাধ্যমে আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মসাক্ষাত ঘটে, যার মাধ্যমে মানসিক শান্তি এবং সমাধি লাভ করা সম্ভব।
৬. রূপান্তরিত রীতিনীতি
তন্ত্রের মধ্যে অনেকগুলি বিশেষ আচার বা রীতিনীতি রয়েছে, যা সাধককে আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে পরিচালিত করে। এগুলি সাধারণ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়ে ভিন্ন এবং অধিক অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ। তন্ত্রের রীতিনীতি সাধকের আত্মার ভিতরে লুকানো শক্তির বিকাশ ঘটানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
৭. মায়া বা অন্তর্দৃষ্টির অতিক্রম
তন্ত্রের নীতিবিদ্যায় মায়া (অর্থাৎ জড়বাদিতা) অতিক্রম করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মায়ার প্রকৃতির তীব্রতা ভেদ করে সাধক তার আসল স্বরূপ ও পরম সত্যের উপলব্ধি লাভ করতে সক্ষম হন। মায়া কে জয় করা তন্ত্রের অন্যতম লক্ষ্য।
৮. দেবতাদের পূজা ও সাধনা
তন্ত্রে দেবতাদের পূজা ও সাধনা এক বিশেষ স্থান দখল করে থাকে। এই পূজা সাধনার মাধ্যমে সাধক আত্মবিশ্বাস ও শক্তির উন্নয়ন করে এবং আধ্যাত্মিক পথে এগিয়ে যায়। কিছু বিশেষ দেবতা যেমন কালিকা, দুর্গা, এবং মহাকালী তন্ত্রে বিশেষভাবে পূজিত হন।
৯. শিক্ষক ও শিষ্য সম্পর্ক
তন্ত্রের আধ্যাত্মিক পথ অনুসরণের জন্য একজন গুরু বা আধ্যাত্মিক শিক্ষক অপরিহার্য। গুরু শিষ্যকে তার আত্মদর্শনের পথে দিশা দেন এবং সাধনামার্গের সঠিক পথটি প্রদর্শন করেন। গুরু-শিষ্য সম্পর্ক তন্ত্রের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ।
১০. অভ্যন্তরীণ শক্তির বিকাশ
তন্ত্রের মাধ্যমে সাধক তার ভিতরের শক্তির বিকাশ ঘটাতে পারে। শরীরের মধ্যে থাকা কুন্ডলিনী শক্তি, যা স্নায়ুতন্ত্রের মূল অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়, তাকে জাগ্রত করে তন্ত্র সাধক আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে এগিয়ে যায়। কুন্ডলিনী শক্তি মুক্তি লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
১১. তন্ত্রের নারী ও পুরুষের ভারসাম্য
তন্ত্রে নারী এবং পুরুষের মধ্যে একটি বিশেষ সমন্বয় থাকে। এখানে নারীকে শক্তির প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয় এবং পুরুষকে তার জ্ঞানের প্রকাশ। এই দুইয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে তন্ত্রের আধ্যাত্মিক লক্ষ্য সাধিত হয়।
১২. জীবন এবং মৃত্যু
তন্ত্রের নীতিবিদ্যায় জীবন এবং মৃত্যু একটি পরিস্রুতির মত। মৃত্যু কোন বিচ্ছেদ নয়, বরং তা জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তন্ত্রের মতে, মৃত্যু হল আত্মার মুকুলিত হয়ে ওঠা ও পরবর্তী জীবনের দিকে অগ্রসর হওয়ার এক মাধ্যম।
১৩. মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি
তন্ত্রের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি হল এই যে, জীবনের সব কিছুই একাত্মতার অংশ। সৃষ্টির প্রতিটি উপাদান—প্রকৃতি, জীব, শক্তি, এবং দেবতা—সব কিছু একে অপরের সাথে সংযুক্ত। এই সংযোগের উপলব্ধি হল তন্ত্রের প্রধান লক্ষ্য।
১৪. নির্বিকারতা ও বোধ
তন্ত্রের সাধনায় নির্বিকারতা অর্জন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানব মনকে সমস্ত জড়বস্তুর থেকে বিচ্ছিন্ন করে সত্য বা পরম সত্যের দিকে মনোনিবেশ করায়। তন্ত্রের মাধ্যমে ব্যক্তি তার অবচেতনা থেকে মুক্তি লাভ করে একটি উচ্চ স্তরের বোধ বা চেতনা অর্জন করে।
১৫. ধর্মের বাইরে যাওয়ার তত্ত্ব
তন্ত্র কখনো কখনো প্রচলিত ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে গিয়ে, কিছু অপ্রচলিত বা বিপরীত আচার-অনুষ্ঠান প্রস্তাব করে। তবে, তন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য হল আত্ম-উন্নতি এবং পরম সত্যের সন্ধান। এই অপ্রচলিত আচারগুলি সাধককে তার আসল স্বরূপের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।
১৬.তন্ত্রসাধনা মানেই দেহের সাধনা। তাই দেহকে জানতে হবে। দেহ ও মনের মধ্যে যে কাম ইচ্ছা বাসনা এগুলা জাগ্রত হয় সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
১৭.রিপু কন্ট্রোল হলে আমরা পরমানন্দ লাভ করতে পারব
১৮.সংসার বিমুখ না হওয়া। সংসার থেকেই দেহকে নিয়ন্ত্রণ করা
১৯.দেহকে তারা মেথডোলজি হিসেবে দেখেছেন। যেখানে দেহের মাধ্যমে বিশ্বকে জানা যায়
২০.তন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষরা বিবাগী হওয়ার চেষ্টা করে না।তারা সংসার থেকেই কিছু হওয়ার চেষ্টা করে
২১.তন্ত্রসাধনা একা করতে হয়.।এখানে আলটিমেট গুরু ব্যক্তি নিজেই।
২২.তন্ত্রের মধ্যে কোন জাত বিচার নেই। বেদ যেমন নিচু জাত এটা টাচ করতে পারতো না। তেমন কোন পার্থক্য নেই।
২৩.সিদ্ধির স্টেজ অনুযায়ী ব্যক্তি তার নির্ধারণ করেন বা নির্ধারিত হয়.
২৪ শৌবো তন্ত্রে উচু নিচু ভেদাভেদ নেই চন্ডীদাস রজকীনী দুজনে দুই বর্ণের ছিলেন।
২৫.স্ত্রীকে দেখা হয় শক্তির আধার হিসেবে। সৃষ্টি করা যে উৎস প্রয়োজন সেটি এমনকি পূজা করে থাকেন।
উপসংহার:
তন্ত্রের নীতিবিদ্যাগত ধারণাগুলি জ্ঞান, শক্তি, আধ্যাত্মিক চেতনাবৃদ্ধি, এবং জীবনের মৌলিক সম্পর্কের গভীর অনুসন্ধান প্রস্তাব করে। এটি একাধারে একটি ধর্মীয় এবং দার্শনিক দর্শন, যা প্রতিটি ব্যক্তির আধ্যাত্মিক মুক্তির দিকে পথপ্রদর্শন করে। তন্ত্রের মাধ্যমে ব্যক্তি তার অন্তর্নিহিত শক্তির বিকাশ ঘটাতে পারে এবং একান্তভাবে নিজের আত্মাকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়।তন্ত্র একটি গূঢ়, গভীর আধ্যাত্মিক পদ্ধতি, যা ব্যক্তি এবং স্রষ্টার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের এক অনন্য মাধ্যম। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক আচারের সমাহার, যা মানুষের জীবনকে সার্বিকভাবে উন্নত করার চেষ্টা করে। তন্ত্রের বিভিন্ন শাখা এবং তার বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান সকলের জন্য সমানভাবে সহায়ক, কিন্তু তা একান্তই নির্ভর করে সাধকের সাধনা, অধ্যাবসায় এবং জ্ঞানের স্তরের ওপর। তন্ত্রের মাধ্যমে একজন সাধক তার অন্তর্দৃষ্টি, শক্তি, এবং মুক্তি লাভের পথকে স্পষ্ট করে।