এ-জে, এয়ার নতুন এক ধরনের মতবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন পরানীতিবিদ্যাতে। দুজন নীতিবিদ এই মতবাদের সমর্থক শুধু এয়ার না। এই মতবাদকে আবেগবাদ বা emotivism বলা হয়। আবেগবাদের সমর্থক হচ্ছেন এ.জে. এয়ার এবং সি. এস. স্টিভেনশন। যদিও দুইজন দুইভাবে ব্যাখ্যা করেছেন কিন্তু তাদের মতবাদটাকে বলা হচ্ছে আবেগবাদ। এই আবেগবাদ মতবাদটা কীভাবে এসেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে যদি আমরা বিবেচনা করতে যাই সেক্ষেত্রে (logical positivism) বা যৌক্তিক প্রত্যাক্ষবাদী মতটাও চলে আসে কিছুটা। কারণ যৌক্তিক প্রত্যাক্ষবাদী মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েই তারা এই আবেগবাদী মতবাদটি দিয়েছিলেন।
যৌক্তিক প্রত্যাক্ষবাদ কীভারে এসেছিল?
যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদের প্রধান হচ্ছেন মরিস স্লিক। তাদের একটা cycle ছিল যাকে বলা হয় ভিয়েনা সারকেল। এই cynele এর কিছু philosopher আরো ছিলেন যারা হচ্ছে মরিম স্নিক, রুডলফ কার্ননাফ, এ-জে-এয়ার, স্টিভেনশন, আটাে নিউরাদ এরা অনেকেই এটাকে বিজ্ঞানের দর্শন ভাবেন। এই দার্শনিকদের (cycle) সাইকেলটাকে বলা হয় ভিয়েনা cycle। বিজ্ঞানে আমরা অনেকটা concreate সত্য পাই কিন্তু দর্শনে সত্য মিথ্যা সেভাবে পাওয়া যায়না। তারা দর্শনের সত্যকে বিজ্ঞানের মতো করে উপস্থাপন করতে গিয়ে একটা আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন যেটাকে বলা হয় যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদী আন্দোলন।
সি এল এ স্টিভেনশন এবং এজে এয়ার এই দুই দার্শনিক যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদী আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আবেগবাদী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদের মূল ভিত্তি ছিল কোন একটা বচনকে সত্য হতে হলে দুটো বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। হয় সেটিকে
- (Analytic) বিশ্লেষণী হতে হবে
- অথবা সেই বাচনটিকে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাইযোগ্য (emperically verified) হতে হবে।
অর্থাৎ কোন একটা বচনকে সত্য হতে গেলে হয় বিশ্লেষনী হতে হবে অথবা সেটাকে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাইযোগ্য হতে হবে। যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীদের সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে তারা এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তাদের ভেরিফিকেশন প্রিন্সিপাল (verification principle) দাঁড় করেছিলন। এই (verification principle) এর উপর ভিত্তি করে তারা মূলত অধিবিদ্যা, নীতিবিদ্যা এগুলোকে অস্বীকার করেছিলেন পুরোপুরিভাবে। এটাও বলেছিলেন যে অধিবিদ্যার বই পড়ে আসলে কি পাওয়া যায় ;এমন কোন সত্যতা আমরা পাই না যেটাকে আমরা সত্য বলতে পারি। একে পুড়িয়ে ফেলা উচিত এসবও বলেছিল। অধিবিদ্যা, নীতিবিদ্যা এবং সাহিত্যকে তারা সমালোচনা করেছিল। সাহিত্যের যে বিষয়গুলো রয়েছে (verification principle) ভেরিফিকেশন প্রিন্সিপাল কে তারা পর্যালোচনা করে এ ধরনের বাক্যগুলোকে তারা একদম অর্থহীন বলেছিলেন। যে নীতিবিদ্যায় সে ধরনের বাক্য রয়েছে কিংবা নৈতিক বাক্যগুলা বা অধিবিদ্যায় যে বাক্য রয়েছে বা সাহিত্যে যে ধরনের কথা বলা হয় সেগুলো আসলে অর্থহীন।এগুলা কোন অর্থ দেয় না। এগুলো আসলে আমরা সত্য বা মিথ্যা বলে প্রতিপাদন করতে পারি না। যেমন: যদি একটি অভিজ্ঞতামূলক বাক্যের কথা বলা হয় করোনা ভাইরাসে এত সংখ্যক রোগী আক্রান্ত হয়েছিল। বিভিন্ন জরিপের পর এর সত্যতা আমরা যাচাই করতে পারবো। কিন্তু যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীরা বলেন “প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত’’ কিংবা “ঈশ্বর অস্তিত্বশীল” কিংবা সাহিত্যে যে সকল বাক্যগুলো ছিল। যেমন জীবনান্দের যে কথাগুলো ছিল এই বাক্যগুলো আসলে কোনোভাবেই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এর সত্যতা বা মিথ্যতা আমরা যাচাই করতে পারিনা। যার কারনে যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীর বলেছেন যেহেতু সেগুলোকে আমরা empiricaly verify হিসেবে প্রমাণ করতে পারিনা বা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এগুলোর সত্যতা বা মিথ্যতা আমরা যাচাই করতে পারিনা সেজন্য এই বাক্যগুলো হচ্ছে একেবারে অর্থহীন।এ মতবাদটাকে এয়ার সমর্থন করে বলছেন যে নৈতিক বাক্য যেগুলো রয়েছে, সে বাক্যগুলোকে অর্থপূর্ণ হতে হলে হয় সেটাকে analytic হতে হবে আর না হয় সেটাকে emprically verified হতে হবে। এই যে নীতিটা বা তত্ত্বটা analytic হতে হবে অথবা empricaly verified হতে হবে অর্থাৎ নৈতিক বাক্যের সত্যতা তিনি যাচাই করতে চাইছেন। যখন আমি বলছি এই বিষয়টা সত্যি হবে যদি আমি সেটাকে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে প্রমান করতে পারি। এটা হচ্ছে, সত্যতা তত্ত্বের অপুরূপতাবাদের সাথে যাচ্ছে। অনুরূপতাবাদে বলা হচ্ছে কোনো একটা বিষয় বা ঘটনা বা বচন সত্য হবে যদি সেটা বাস্তবতার অনুরূপ হয়। বাস্তবতার অনুরূপ হলে সত্য হবে আর বাস্তবতার অনুরূপ না বলে সেটা মিথ্যা হবে। তার মানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এ.জে এয়ারের আবেগবাদী মতবাদটা অনেকটা সত্যতা তত্ত্বের অনুরূপতাবাদের সাথেও মিলে যাচ্ছে। আবার তিনি যখন বলছেন যে নৈতিক বাক্য “প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত” এটাকে অর্থপূর্ণ হতে হলে হয় analytic হতে হবে নতুবা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে veifird হতে হবে। এখন এটি কী analytie বাক্য? দু ধরনের বাক্য আছে synthetie এবং analytic।
Analytie বাক্যের দুটো শর্ত ছিল যে একটা বাক্যকে কখন analytic বাক্য বলা হবে?
যদি উদ্দেশ্য বিধেয়ের মধ্যে নিহিত থাকে অথাৎ বিধেয় উদেশ্য সমম্পর্কে নতুন কোনো না দেয় এবংআমরা যদি বাক্যটিকে অস্বীকার করি সেক্ষেত্রে যদি স্ববিরোধিতা তৈরি হয় তাহলে সেই ধরনের বাক্যকে আমরা analytic বাক্য বলে থাকি।প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত এই বাক্যটির সত্যতা এই দুটোর মাধ্যমে নির্ণয় করা যাচ্ছে না। এখানে এই বাক্যটি হতে নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাই এটি হচ্ছে synthetic বাক্য। কান্ট বলেছেন আমি যখন কোন কিছুকে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাই করতে পারি তখন সেটা একটা synthetic বাক্য হয়।কান্টের কাছে যেটা empricaly verified বাক্য সেটা হচ্ছে synthetic বাক্য।
তার মানে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত এই নৈতিক ব্যক্যটিকে আমরা কোনোভাবেই analytic বাক্য বলতে পারছিনা। এটাকে অভিজ্ঞতার মাধ্যমেও যাচাই করা যার কিনা। যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীরা এটাকে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাই করা যায় কীনা তার জন্যে চারধরনের যাচাইকরণ নীতির কথা বলেছেন। তারা বলেন চারভারে যাচাই করা যায় বা চারটি standard এর ভিত্তিতে আমরা কোনো একটা বিষয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাই করতে পারি
- সবল যাচাইকরণ
- দুর্বল যাচাইকরণ
- ব্যবহারিক যাচাইকরণ
- নীতিগত যাচাইকরণ
সবল অর্থে যাচাইকরণ:
অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সরাসরি যদি যাচাই করতে পারি সেট হচ্ছে সবল যাচাইকরন।
দুর্বল যাচাইকরণ :
অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে যদি যাচাই বা প্রমান করতে পারি সেটা হচ্ছে দুর্বল যাচাইকরণ।
ব্যবহারিক যাচাইকরণ:
এটি হচ্ছে আমি চাইলেই সেটাকে প্রমাণ করতে পারি কিন্তু আমরা আসলে সেটাকে করিনা।
নীতিগত যাচাইকরণ
এটি হচ্ছে আমি হয়তো এই মুহূর্তে সেটাকে প্রমান করতে পারছিনা কিন্তু ভবিষ্যতে চাইলে হয়তো সেটা আমি প্রমাণ করতে পারবো
এখন এ-জে-এয়ার আসলে জোর দিয়েছিলেন সবল এবং দুর্বল যাচাইকরনের দিকে। তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন যে, নৈতিক বাক্যগুলোকে এই দুইভাবে যাচাই করা যায় কিনা। প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত এমন ঐ বাক্যটিকে সবলভারে যাচাই করা যায় কীনা? এটাকে কোনোভাবেই সবলভাবে যাচাই করা যায়না। আমরা কিভাবে একটি argument তৈরি করি। deductive and inductive way তে করি। deductive ভাবে যেটাকে আমরা পাই সেটাকে আমরা সবল অর্থে যাচাই করতে পারি। Deductive এর সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত বা নিশ্চিত। কিন্তু Inductive এর সিদ্ধান্ত টি সম্ভাব্য। সেক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি deduction argument এর মাধ্যমে আমরা যে সিদ্ধান্তটি পাই সেটাকে আমরা সবল অর্থে যাচাই করতে পারি। এবং Inductive এক মাধ্যমে আমরা সেটাকে দুর্বল অর্থে যাচাই করতে পারি। যেমন যদি বলা হয় একটি deductive argument কেমন হতে পারে।
প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত এর deductive argument,
সকল মানুষের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত ক হয় একজন মানুষ
সুতারং ক এর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত।
Inductive argument এর কথা চিন্তা করি তাহলে হবেঃ
ক এর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত,
গ এর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত,
ঘ এর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত
সুতারং সকল মানুষের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত
পররতী মানুষেরও প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত। এভাবে আমরা একটা সম্ভাব্য সিদ্ধান্তে আসতে পারি।কিন্তু আামরা বাস্তবে দেখি সকল মানুষ প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে চলে না। বিপরীত দৃষ্টান্ত যখন দেখি তখন এই সিদ্ধান্তটি মিথ্যা হয়ে যায়। আমরা অবরোহ বা আরোহের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্তটি পাচ্ছি সেটা মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে। যার কারনে এয়ার দেখাতে চেয়েছিলেন, নৈতিক যে বাক্যগুলো আছে সেগুলোকে না আমরা সবল অর্থে যাচাই করতে পারছি, না দুর্বল অর্থে যাচাই করতে পারছি। যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদী নীতি অনুযায়ী একটি বাক্য বা একটি বচন অর্থপূর্ণ হবার জন্য যে দুটো শর্ত রয়েছে তার কোনো শর্তই আসলে নৈতির বাক্যগুলো বা নৈতিক বচনগুলো রয়েছে সেগুলো পূরন করছে না। যার কারনে এয়ার বলছেন নৈতিক বচনগুলো আসলে তার্থহীন। এ কারণে এদের সত্য মিথ্যা আমরা অভিজ্ঞার মাধ্যমে যাচাই করতে পারছিনা।
আবার এই বাক্যগুলো analytic ও না। যার জন্য নৈতিক বচনগুলোকে তিনি অর্থহীন বলছেন। এখন এয়ার এর যে তত্ত্বটি সেটি তিনি দিয়েছিলো language truth and logie বইটিতে। যেখানে ৬ষ্ঠ অধ্যায় আছে সেখানে তিনি নীতিদর্শন এবং ধর্মতত্ত্বের সমালোচনা করেছেন। (মূলত এই ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের উপর আমাদের আলোচন focused হবে)।
এ.জে এয়ার এর মতবাদের দুটো দিক রয়েছেঃ
- একটি হচ্ছে negative or criitical part বা সমালোচনামূলক অংশ
- Positive or constructive part বা গঠনমূলক অংশ
Negative ar critical part তিনি প্রচলিত যে মতবাদ রয়েছে সেই মতবাদের সমালোচনা করেছেন।constructive part এ তিনি এই মতবাদের সমালোচনা করা সত্ত্বেও নতুন একটি গঠনমূলক প্রস্তাবনা করেছেন। অর্থাৎ এ.জে. এয়ারের মতবাদটিকে দুই ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় বা দুটো অংশ আছে বলা যায়। একটি সমালোচনামূলক অংশ (Critical part) এবং অন্যটি হচ্ছে গঠনমূলক অংশ (constructive part)
সমালোচনামূলক অংশে (Critical part) তিনি প্রচলিত তিনটি মতবাদের সমালোচনা করেছিলেন,
- ব্যক্তিনিষ্ঠ মতবাদ
- উপযোগবাদের সমালোচনা
- ম্যুরের সমালোচনা
ব্যক্তিনিষ্ঠ মতবাদ সমালোচনা: ব্যক্তিনিষ্ঠ মতবাদে বলা হয় কোন একটি ঘটনা বা কোন একটি বাক্য সত্য হবে যদি কোনো একজন ব্যক্তি সেটাকে অনুমোদন করে। একজন ব্যক্তি সেটাকে অনুমোদন করলে সেটা সত্য অনুমোদন না করলে সেটা মিথ্যা হবে। এখন এই ব্যক্তিনিষ্ঠ মতবাদের একটা সমস্যা হচ্ছে Auto-bio definitionnal definition (আত্মজৈবনিক সংজ্ঞা) এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ব্যক্তি অনুমোদন করলে সেটা সত্য আর অনুমোদন না করলে সেটা মিথ্যা। এখন ব্যক্তিনিষ্ঠ মতবাদের অসুবিধা হচ্ছে একই বাক্য একজন বলছে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত আর একজন বলছে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত নয়। তাহলে একই সাথে দুটো মতবাদে চলতে পারে। এয়ার বলেছেন এ মতবাদকে যদি আমরা মানতে যাই, সে ক্ষেত্রে বিপরীতধর্মী দুটো মতবাদ কেও আসলে আমাদের মেনে নিতে হয়। এটা হচ্ছে সমস্যা। যেমন কেউ বলল প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত এটা যেমন সত্য, তেমনি ভাবে কেউ যদি বলে যে প্রতিজ্ঞা করতেরক্ষা করা উচিত না। ব্যক্তিনিষ্ঠ মতবাদ অনুসারে এটাকে আমাদের সত্য হিসেবে মেনে নিতে হচ্ছে। যার কারণে প্রকৃত সত্য আমরা পাচ্ছি না। আবার এ মতবাদ অনুযায়ী এটাও বলা যায় যে কেউ যদি বলে ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী আবার অন্য কেউ যদি বলে ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী নয় তাহলে ব্যক্তিনিষ্ঠ মতবাদ অনুযায়ী দুটোকেই আমাদের সমর্থন হচ্ছে। এ মতবাদ অনুসারে একই সাথে বিপরীত দুটি মতবাদ চলছে। তেমনি ভাবে এয়ার দেখাতে চেয়েছিল এটা হচ্ছে একটি সমস্যা। কেউ যদি বলে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত এবং অন্যজন যদি বলে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত নয় এ দুটো ভিন্নধর্মী মতবাদ একই সাথে চলতে পারে বলে এটা ব্যক্তিনিষ্ট মতবাদের একটা ত্রুটি। এ জে এয়ার দেখাতে চেয়েছে নৈতিক যে বাক্যগুলো রয়েছে আমরা ব্যক্তিনিষ্ঠ মতবাদকে যদি মেনে নেই অর্থাৎ কেউ যদি বলে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত এবং অন্যজন যদি বলে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত নয়। একটা মেনে নিলে অন্যটা মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে। বাস্তবেও এমন দেখা যায়, বাস্তবে দেখা যায় একজন হয়তোবা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করছেন অন্যজন হয়তো বা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করছেন না। তার মানে হচ্ছে যিনি প্রতিজ্ঞা রক্ষা করছেনা তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি প্রতিজ্ঞা রক্ষা করছেন তার কাছে বাক্যটা বা বচনটা মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে। এটা হল ব্যক্তিনিষ্ঠ মতবাদের সমালোচনা
উপযোগবাদী মতবাদের সমালোচনা:
উপযোগবাদী মতবাদ অনুসারে বসর্বাধিকলা হয় যে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের জন্য সর্বাধিক পরিমাণে সুখ এর কথা। যে কাজটি সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের জন্য সর্বাধিক পরিমাণে সুখ দিতে পারে সে কাজটি হচ্ছে ভালো এবং যে কাজটি সংখ্যক মানুষের জন্য সর্বাধিক পরিমাণে সুখ দিতে পারে না সেই কাজটি হচ্ছে মন্দ। উপযোগবাদী মতবাদের একটি প্রধান পথনির্দেশ হিসেবে আমরা যদি বলি সুখ হয় ভালো। এটিকে যদি বিবেচনা করি তাহলে এয়ার এই বাক্যটিকে কিভাবে সমালোচনা করেছেন। এখানেও তিনি তার নীতিবিদ্যাকেই প্রয়োগ করেছিলেন যে সুখ হয় ভালো। এই বাক্যটি কোনভাবেই এনালিটিক (Analytic) না এটা হচ্ছে (synthetic) সিন্থেটিক বাক্য ভালো। এ দুটো অর্থাৎ উদ্দেশ্য ও বিধেয় আমাদের ভিন্ন দুটি তথ্য দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে আমরা একটা নতুন তথ্য পাচ্ছি। যদি সুখ নয় ভালো অর্থাৎ বাক্যটিকে আমি যদি অস্বীকার করি তখন বাক্যটি স্ববিরোধী হবে না।আমরা যখন বলেছিলাম cat is not cat এটা একটা স্ববিরোধী বাক্য । সেজন্য এটাকে এনালিটিক (analytic) বাক্য বলা যায় কিন্তু যখন বলছি সুখ হয় অথবা নয় ভালো আসলে স্ববিরোধী হচ্ছে না। যে কারণে সুখ হয় ভালো এ বাক্যটিকে Analytic বাক্য বলতে পারছি না। একে আমরা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাই করতে পারছিনা।সবল এবং দুর্বল কোন ভাবেই যাচাই করা যাচ্ছে না।
সুখ হয় ভালো যদি আমরা ইন্ডাক্টিভ( (inductive argument) আর্গুমেন্টে সাজাই তখন পাওয়া যাচ্ছে
ক সুখ হচ্ছে ভালো
খ সুখ হচ্ছে ভালো
গ সুখ হচ্ছে ভালো
সুতরাং সুখ হয় ভালো
এটাকে deductive ওয়েতে সাজালে পাওয়া যায়
সকল সুখ হয় ভালো
ক হয় সুখ
সুতরাং ক হয় ভালো।
সবল এবং দুর্বল যাচাইকরনের একটা সম্পর্ক হচ্ছে যেটাকে আমরা দুর্বল ভাবে যাচাই করতে পারি না সেটাকে আমরা কোনভাবেই সবল ভাবে যাচাই করতে পারব না।বা যাচাই করা সম্ভব নয়। আমরা বাস্তবে দেখি যে কোন একটা কাজ ভালো হলেও সেটা সুখদায়ক নাও হতে পারে আবার কোন একটা কাজ সুখদায়ক হলেও সেটা ভালো নাও হতে পারে। অর্থাৎ বাস্তবে এর ব্যতিক্রম দেখি। অর্থাৎ এ বাক্যের সত্যতা আসলে সেভাবে ভেরিফাই বা যাচাইযোগ্য হয় না। বাক্যটিকে আমরা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারছি না। এ বাক্যের সত্যতা সবল বা দুর্বল যাচাইকরণ কোনভাবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হচ্ছে না। একইভাবে বলা হয় প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত সে ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে বাস্তবে এর বিপরীত দেখা যাচ্ছে।
যদি বলি,
ক হয় মরণশীল
খ হয় মরণশীল
সুতরাং পরবর্তী সকল মানুষ হয় মরনশীল।
কিংবা
সকল মানুষ হয় মরণশীল
ক হয় একজন মানুষ
সুতরাং ক হয় মরণশীল।
এই যে বাক্যটি ব্যতিক্রম কখনই প্রকৃতিতে দেখা যায়নি। প্রকৃতিতে কিছু মানুষ হয় বা সকল মানুষ মরণশীল এটাকে ব্যতিক্রম দেখা যায়নি । ব্যতিক্রম দেখা যায়নি বলেই আমরা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাই করতে পারি এবং একে সত্য হিসেবে মেনে নেই।
কিন্তু এই নৈতিক বাক্য গুলোর ব্যতিক্রম আসলে দেখা যাচ্ছে। যে কারণে এগুলোকে বলা হচ্ছে ভেরিফাই(verified) করা যায় না। এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে আবার কোনভাবেই এর সত্যতার প্রতিপাদন আমরা করতেই পারছি না। অর্থাৎ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কোনভাবেই ভেরিফাই (verified) করতে পারছি না। যেহেতু এই বাক্যগুলোকে কোনোভাবেই ভেরিফাই করা যাচ্ছে না। এয়ার বলেছেন এই বাক্য গুলো আসলে অর্থহীন। এই বাক্যগুলোর কোন অর্থ নেই। সর্বশেষ তিনি বলেছেন এগুলে কোন meaning আমাদের দেয় না। হয়তো এর ব্যবহারিক কার্যকারিতা আছে কিন্তু সেগুলো অর্থপূর্ণ বাক্য নয়। এটা হচ্ছে উপযোগবাদের সমালোচনা। যেটাকে কান্ট সিন্থেটিক synthetic বলেছেন সেটাকেই তিনি emprically verified বলেছেন।
ব্যক্তিনিষ্ঠ মতবাদ এবং উপযোগবাদী মতের মতো আরো কিছু সমস্যার কথা এয়ার বলেছিলেন। তিনি বলেন
- এই দুটো মতবাদ নীতিবিদ্যার যে কাজ সেটাকে আমাদের সামনে ভুল ভাবে বা ভ্রান্ত ভাবে উপস্থাপন করে অর্থাৎ ব্যক্তিনিষ্ঠ মতবাদ এবং উপযোগবাদী মতবাদ নীতিবিদ্যার যে কাজ তাকে ভ্রান্তভাবে উপস্থাপন করে।
- এ ধরনের মতবাদে নৈতিক বাক্য থেকে ননৈতিক বাক্যে যেতে চায় তবে যে পদ্ধতিতে যেতে চায় সে পদ্ধতিতে ভ্রান্তি রয়েছে
অর্থাৎ এ দুটো মতবাদ মনে করে নৈতিক বাক্যকে ননৈতিক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। তবে যে পদ্ধতিতে তারা এই রূপান্তরের প্রক্রিয়াটা গ্রহণ করে সেই পদ্ধতিতে কিছু ভ্রান্তি রয়েছে।
প্রথম দাবিটি হচ্ছে এ দুটি মতবাদ নীতিবিদ্যার কাজকে ভ্রান্তভাবে উপস্থাপন করে
এয়ার মনে করেন বা এ দুটো মতবাদ মনে করে নীতিবিদ্যা চার ধরনের কাজ রয়েছে
প্রথমত :
নীতিবিদ্যা এমন কিছু বচন নিয়ে কাজ করে যেগুলো নৈতিক পদের সংজ্ঞায়ন নিয়ে কথা বলে। নৈতিক পদের সংজ্ঞার সম্ভাব্যতা বা নৈতিক পদের বৈধতা রয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে।
দ্বিতীয়তঃ
নীতিবিদ্যার কাজ হচ্ছে এমন কিছু নৈতিক বচন বা এমন কিছু নৈতিক অবধারন নিয়ে যা নৈতিক অভিজ্ঞতা এবং এদের কারণ নিয়ে অনুসন্ধান করে
তৃতীয়তঃ এমন কিছু নৈতিক বচন বা অবধারণ রয়েছে যেগুলো নৈতিক সদগুণ বা নৈতিক উপদেশ নিয়ে আলোচনা করে।
চতুর্থত:
এমন কিছু নৈতিক বচন রয়েছে যেগুলা প্রকৃত নৈতিক বচন বা এক্সচুয়াল মরাল জাজমেন্ট নিয়ে আলোচনা করে।
এখন এয়ার বলেন এ দুটো মতবাদ নীতিবিদ্যার যে চারটি কাজের কথা বলে এর মধ্যে প্রথমে যে কাজটি রয়েছে অর্থাৎ সংজ্ঞায়ন। নৈতিক পদের সংজ্ঞার সম্ভাব্যতা বা নৈতিক পদের সংজ্ঞার বৈধতা নিয়ে আলোচনা করবে। এটাই নীতিবিদ্যার আলোচনার বিষয়বস্তু। বাকি তিনটি কাজের কথা বলা হয়েছে এগুলা নীতিবিদ্যার আলোচনার বিষয়বস্তু না। এখন এটাকে এয়ার কিভাবে গ্রহণ করেছেন। যখন বলা হচ্ছে নীতিবিদ্যার কাজ করে এমন কিছু বচন নিয়ে যেগুলা নৈতিক অভিজ্ঞতা এবং এদের কারণ নিয়ে আলোচনা করে সেগুলোকে তিনি বলেছেন অভিজ্ঞতা।নৈতিক অভিজ্ঞতা এবং এদের কারণ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নীতিবিদ্যার আলাদা শাখা রয়েছে সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান। এই দুটি শাখা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। মনোবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞানে দুটো শাখা আলোচনা করে আমাদের অনৈতিক আচরণ নিয়ে। কিন্তু নীতিবিদ্যা অনৈতিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করে না। নীতিবিদ্যা আলোচনা করে ঐচ্ছিক আচরণ নিয়ে যার কারণে নৈতিক অভিজ্ঞতা এবং এদের কারণ কোনোভাবেই নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় হতে পারে না।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে নৈতিক সদগুণ বা নৈতিক উপদেশ :
যদি একজন ব্যক্তি বলে যে তোমার সত্য কথা বলা উচিত বা তোমার মন্দ কাজ পরিহার করা উচিত। এই যে নৈতিক উপদেশমূলক বাক্য গুলো রয়েছে এগুলো যখন বলা হয় তখন বক্তা আসলে মনে করে যে শ্রোতা কোনরকম বিচার বিবেচনা না করেই সেটাকে গ্রহণ করবেন। এখানে অর্থাৎ বিচার বিবেচনা করার কোন অবকাশ বক্তা রাখছেন না। তিনি আশা করছেন শ্রোতা যে কথাটা শুনবে সে কথাটা কোন যাচাই-বাচাই করবে না।আমি যেটা বলছি সেটাকে সে গ্রহণ করবে। যার জন্য এয়ার বলেছেন নৈতিক সদগুণ বা নৈতিক উপদেশমূলক যে বচনগুলো রয়েছে এগুলো আসলে প্রকৃত বচন না। এগুলা এক ধরনের আকস্মিক উক্তিকে প্রকাশ করে। যেকারণে এগুলা নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়বস্তু না।
তৃতীয়টি হচ্ছে প্রকৃত নৈতিক অবধারণ বা Actual moral Judgement: নীতিবিদ্যা আসলে একচুয়াল মরাল জাজমেন্ট (actual moral judgement) নিয়ে কাজ করে না।এয়ার বলতে চাইছেন(actual moral judgement)প্রকৃত একচুয়াল মোরাল জাজমেন্ট আমরা তখনই দিব যখন একটা বচনে যদি কোনো নৈতিক পদ থাকে । তাকে আমরা নৈতিক বচন বলতে পারি। যেমন:যদি বলা হয় আপনি এই কাজটি করে অন্যায় করেছেন you acted wrongly doing this এই বাক্যটা যখন বলা হচ্ছে তখন এটি হচ্ছে একটি নৈতিক বচন। এখানে wrong কথাটি থাকার কারণে একে আমরা নৈতিক বচন বলছি।এই বাক্যে এটাকে কোনোভাবে( wrong) কে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে না। actual moral judgement এ যে বাক্যগুলোতে রয়েছে সেগুলোকে কিন্তু moral term কে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে না। এখানে একটি ব্যক্তির কাজের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। moral judgement নৈতিক পদকে সংজ্ঞায়িত করছে না। তাই এটাও নীতিবিদ্যার আলোচনার বিষয়বস্তু না।
এয়ার আসলেই তাকেই নীতিবিদ্যা বলতে চেয়েছেন যেখানে নৈতিক পদের সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করা হয়। মুরও একই কথা বলেছিলেন যে আমাদের আলোচনা হবে নৈতিক পদের সংজ্ঞায়ন নিয়ে। অর্থাৎ এই দিক দিয়ে এয়ারের সাথে ম্যুর এর কিছুটা মিল রয়েছে। এয়ার কিভাবে ব্যক্তিনিষ্ঠ এবং উপযোগবাদী মতবাদ নীতিবিদ্যার কাজকে আমাদের সামনে ভ্রান্ত ভাবে উপস্থাপন করে এটাকে তিনি খণ্ডন করলেন।
আরেকটি অভিযোগ ছিল যে এই দুটি মতবাদ মনে করে যে নৈতিক বাক্যকে ননৈতিক বাক্যে রূপান্তর করা যায় কিন্তু যেভাবে তারা নৈতিক বাক্য থেকে ননৈতিক বাক্যে রূপান্তর করছে সেই পদ্ধতিতে ভুল রয়েছে বা এতে ভ্রান্তি রয়েছে।
এটি ছিল তার সমালোচনা। মানে এয়ার দেখাতে চাইলেন যে কিভাবে এ দুটি মতবাদ ভুলভাবে নৈতিক বাক্যে থেকে ন নৈতিক বাক্যে রূপান্তর করছে। তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে নৈতিক বাক্য থেকে ননৈতিক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। ব্যক্তিনিষ্ঠ এবং উপযোগবাদী মতবাদ মনে করছে নৈতিক বাক্য থেকে ননৈতিক বাক্যে রূপান্তর করা যায় এবং এয়ার এটার সাথে একমত পোষণ করেছিলেন। এয়ার বলেছিলেন যদিও নৈতিক বাক্য থেকে ননৈতিক বাক্যে যাওয়া যায় কিন্তু এই দুটো মতবাদ যেভাবে নৈতিক বাক্য থেকে ননৈতিক বাক্যে যাচ্ছে সেই প্রক্রিয়াটিতে আসলে ভুল রয়েছে। এটার বর্ননা দিতে গিয়ে তিনি দুই ধরনের প্রপোজিশনের (proposition) কথা বলেছিলেন।
- Ethical proposition
- Descriptive proposition
অর্থাৎ নৈতিক বচন হতে পারে এবং বর্ণনামূলক বচন হতে পারে। নৈতিক বচন একটা সিম্বল কে প্রকাশ করতে পারে সেটা হচ্ছে নরমেটিভ ইথিক্যাল সিম্বল (symbol) বা আদর্শনিষ্ঠ নৈতিক প্রতীক এবং ডেস্ক্রিপটিভ প্রপোজিশন (Descriptive proposition) প্রকাশ করে। ডেসক্রিপটিভ এথিকাল সিম্বল বা বর্ণনামূলক নৈতিক বচন। এ দুটো বচনের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এই দুটো বচন যখন কোন বাক্যে উপস্থাপন করা হয় তখন এদের গঠন একইথা এরকম। অর্থাৎ normative ethical symbol এবং descriptive ethical symbol দেস্ক্রিপটিভ এথিক্যাল সিম্বল এর গঠন একই রকম কিন্তু এদের কাজ হচ্ছে ভিন্ন। গঠন কিভাবে এক রকম হয়। যদি বলা হয় শিশু হত্যা করা হয় অন্যায়। এ বাক্যটি বলা হলে এখানে অন্যায় শব্দটি ব্যবহার করলাম একটা moral term মরাল ট্রাম। এ দুটির মধ্যে পার্থক্য কিভাবে করা যায়। এদের গঠন একই রকম। একই বাক্যে এদের প্রকাশ করতে পারি। একটা standred এর ভিত্তিতে কোন একটা বাক্যকে যাচাই করতে যাব তখনই সেটা হবে normative ethical সিম্বল আর যখন কোন কিছুর বর্ণনা দিতে যাওয়া হবে তখন সেটাকে বলা হবে descriptive ethical symbol । “শিশু হত্যা করা হয় অন্যায়” বাক্যটি এটি যে বচনকে প্রকাশ করে এখানে একটা moral পদ রয়েছে সেটা হচ্ছে killing female child is wrong এখন normative ethical symbol আমি কখন বলব যখন এটা একটা স্ট্যান্ডার্ড এর ভিত্তিতে জাস্টিফাইড করব। যদি বলা হয় সবার জীবনই মূল্যবান,মেয়ে শিশুর জীবন মূল্যবান তাই মেয়ে শিশুকে জীবন্ত হত্যা করা অন্যায় বলে বিবেচিত হবে। যার কারণে যেকোন জীবন হত্যা মানেই হচ্ছে অন্যায় সুতরাং নারী শিশুর জীবন্ত যার কারণে নারী শিশু হত্যা করা হচ্ছে অন্যায়। অর্থাৎ মরাল স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে জীবন হচ্ছে মূল্যবান। এই মরাল কে ফলো করে বলতে পারছি জীবন হচ্ছে মূল্যবান আর এই কাজটিকে অন্যায় হিসেবে প্রতিপাদন করলাম। এটি হলো নরমেটিভ এথিক্যাল সিম্বল। এদের গঠন এক হলেও এদের কাজ আলাদা একটা প্রকাশ করে নরমেটিভকে আর একটা প্রকাশ করে সোশ্যাল ফেনোমেননকে। যখন কোন কিছুর বর্ণনা দেয়া হবে বা দিতে গেলে social phenomenon যেগুলো রয়েছে সেগুলো চলে আসে অর্থাৎ সামাজিক পরিবেশ বা সামাজিক পরিস্থিতি কোন একটা বিষয়কে যখন সামাজিক পরিবেশ বা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করব তখন সেটা হবে ডেসক্রিপটিভ এথিক্যাল সিম্বল।
যদি বলা হয় : বৈরি পরিবেশের কারনে জনসংখ্যা বেশি হয়ে গেছে তার কারনে এখন আমাদের নারী শিশু হত্যা করতে হচ্ছে কিংবা নারী শিশুর সংখ্যা হয়তোবা বেড়ে গিয়েছে সেজন্য নারী শিশু হত্যাকে আমি অন্যায় বলে মনে করছিনা। এইযে যখন একটা কারন বর্ণনা করা হচ্ছে social prespective এ বিবেচন করা হচ্ছে এটা descriptive এখানে কোনো moral standard follow করা হচ্ছেনা। যারকারণে এটাকে বলা হচ্ছে D.E.S.
এয়ার এই যে দুটো মতবাদ ব্যক্তিনিষ্ঠ এবং উপযোগবাদী মতবাদ রয়েছে এই মতবাদ অনুসারে কীভাবে নৈতিক বাক্যকে ন- নৈতিক বাক্যে রূপান্তর করা যাবে। যদি বলা হয় A is good এই বাক্যটিকে ব্যক্তিনিষ্ঠ মতবাদ অনুসারে কীভাবে ন নৈতিজ্ঞ বাক্যে রূপান্তরিত করা যাবে। আমি a কে support করি যে কারণে আমি বলছি a is good এটারে অামরা ব্যক্তিনিষ্ঠ মতবাদ অনুসারে ন-নৈতিক বাক্যে রুপান্তর করলাম। আর যদি বলা বলা হয় a produced the highest happiness that’s a is good “A is good. এটাকে আমরা রূপান্তর করলাম এভাবে” A produces the highest happines এই প্রথমটা নৈতিক বাক্য, পরেরটা হচ্ছে ন-নৈতিক বাক্য। subjective theory হচ্ছে i support a বা আমি a কে সমর্থন করি। এ ধরনের বাক্যের মাধ্যমে আমরা নৈতিক বাক্যকে ননৈতিক বাক্যের রূপদর করতে চাইছি।এ দুটো মতবাদ মনে করে যেকোন একটা বিষয়ে যদি normative ethical symbol হিসাবে বিবেচনা করি তাহলে সেক্ষেত্রে সেটাকে আমরা ন নৈতিক বাক্যে রূপান্তর করতে পারবো কিন্তু এয়ার অন্য কথা বলেছেন।তিনি বলেছেন এটি normative না হয়ে descriptive হয় তাহলেও সেটাকে আমরা ন নৈতিক বাক্যে রূপান্তর করতে পারবো। normative হলে সেটাকে ন নৈতিক বাক্যে রূপান্তর করতে পারবোনা আর descriptive হলে সেটাকে আমরা নৈতিক বাক্যে রূপান্তর করতে পারব।কারণ descriptive এ আমরা assertive sentence কে assertive ই বলতে পারি।নানা ভাবে এটাকে আমরা described করতে পারি।কিন্তু normative এর ক্ষেত্রে একটা স্ট্যান্ডার্ড ফলো করেই আমরা সেটাকে ন নৈতিক বাক্য রূপান্তর করি। এয়ার যেটা বলতে চাইছেন সেটা হচ্ছে যে এই দুটো মতবাদ মনে করে normative etical symbol থাকলে সেটাকে নৈতিক বাক্যে রূপান্তর করা যায় যার কারণে এটা হচ্ছে ভুল। এয়ার বলছেন যে descriptive হলেই সেটাকে ননৈতিক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। এয়ারের ক্রিটিক্যাল পার্টের সমালোচনা হচ্ছে এটি। আরো দুটি সমালোচনা আছে ক্রিটিক্যাল পার্টের।একটি হচ্ছে সজ্ঞাবাদের সমালোচনা।
সঙ্গাবাদী মতবাদের সমালোচনায় তিনি বলেছেন :
এটি নৈতিক বাক্য থেকে ননৈতিক বাক্যে রূপান্তরের কথা বলে। স্বজ্ঞবাদে যদি বলা হয় কোন একজন ব্যক্তি স্বজ্ঞার মাধ্যমে কোন একটা বিষয় জেনেছেন। যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদের এয়ারের দুটো মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ইম্পেরিকালি ভেরিফাইড হতে হতে হবে এবং এনালিটিক হতে হবে। কোন একটি বাক্যকে অর্থপূর্ণ হতে হলে এই দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে। এখন এয়ার বলেছেন সংজ্ঞার মাধ্যমে আমরা যে বিষয়গুলো পাই যদি কোন মরাল জাজমেন্ট বা নৈতিক অবধারণ বা নৈতিক বচনকে সজ্ঞার মাধ্যমে যাচাই করতে যাই। তাহলে যেটাকে আমরা emperically verified করতে পারিনা, আমি যদি বলি আমি জানি যে ক নামক কাজটি করা হয় উত্তম। এটি আমি আমার সজ্ঞার মাধ্যমে মাধ্যমে জেনেছি। যেটাকে সংজ্ঞা মাধ্যমে জানা হয়েছে সেটাকে আমরা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বা বুদ্ধির মাধ্যমে পাই না। অভিজ্ঞতার জগতে যাচাই করতে পারি না আমরা। এটা তাই emperically verified না। আবার যদি বলা হয় Analytic এনালিটিক কিনা। আমি জানছি যে এই কাজটি করা উত্তম এটাকে আমরা যদি এনালিটিক হিসেবে বিবেচনা করি। আমি যদি অস্বীকার করি সজ্ঞার মাধ্যমে পাওয়া সেই জ্ঞানটিকে তারপর স্ববিরোধিতা তৈরি হচ্ছে না। আমি যদি বলি হ্যাঁ আমি তাকে সজ্ঞার মাধ্যমে পেয়েছি তাও কোন স্ববিরোধিতা তৈরি হচ্ছে না। যে কারণে এয়ার বলেছেন সংজ্ঞার মাধ্যমে আমরা যেটা পাচ্ছি তা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাই যোগ্য না আবার বিশ্লেষক না। যে কারণে এটাকে আমরা অর্থহীন বলছি। এয়ারের মত অনুসারে অর্থহীন বলতে হচ্ছে যেহেতু সেগুলো প্রকৃতপক্ষে অর্থহীন না তাহলে এটাতেও এক ধরনের ভ্রান্তি
মুরের সমালোচনা :তিনি বলেছেন ভালো একটা সরল ধারণা। এজন্য এটাকে বিশ্লেষণ করা যায় না। তাই ভালোকে তিনি অসংজ্ঞায়িত বলেছেন। কিন্তু এয়ার আসলে এ কথা বলেননি, তিনি ভালোকে এক ধরনের ছদ্ম ধারণা বলেছেন। এটাকে তিনি সিডো কনসেপ্ট বলেছেন। তিনি বলেছেন নৈতিক যে পদগুলো রয়েছে এগুলো এক ধরনের ছদ্ম ধারণা প্রকাশ করে। যে কারণে আমরা নৈতিক পদকে সংজ্ঞায়িত করতে পারিনা। এ সম্পূর্ণটাই হচ্ছে এয়ার এর মতবাদের ক্রিটিক্যাল পার্ট বা সমালোচনা মূলক অংশ।
Critical part এ তিনি চারটি মতবাদের সমালোচনা করেছিলেন
১. ব্যক্তিনিষ্ঠ,
২. উপাযাণবাদী মতবাদ
৩. মূরের সমালোচনা এবং
৪- সজ্ঞাবাদের সমালোচনা
এই মতবাদের সমালোচনার পরে এয়ার নিজে যে একটা নতুন মতবাদ দিয়েছিলেন সেটাকে বলা হয় এয়ারের মতবাদের contructive part যা গঠনমূলক অংশ। এয়ারের মতবাদটাকে বলা হয় আবেগবাদ। আবেগবাদী মতবাদে এয়ার চারটি দাবী করেছেন। সেই চারটি দাবীর প্রেক্ষিতে আমর তার এই মতবাদটিকে বিশ্লেষণ করতে পারি।
- প্রথম দাবীটা হচ্ছে নেতিক পদ বা নৈতিক প্রত্যয়গুলো হচ্ছে এক ধরনের ছদ্ম ধারনা বা cedy concept. নৈতিক যে পদগুলো রয়েছে যেখানে ভালো-মন্দ, উচিত অনুচিত এই term গুলো যখন কোনো বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন এই term গুলোকে তিনি এক ধরনের ছদ্ম ধারনা বলছেন।
- দ্বিতীয় দাবী নেতিক বচন বা অবধারনের কাজ হচ্ছে অনুভূতি প্রকাশ করা
- নৈতিক বচনগুলোর কাজ শুধু অনুভূতি প্রকাশ করাই নয় অন্য ব্যক্তির মধ্যে সেই একই অনুভূতি জাগ্রত করার চেষ্টা করা। এটা নৈতিক বচন বা নৈতির অবধারনের আরেকটা উদ্দেশ্য।
- নৈতিক অবধারণগুলো এমন হবে যেগুলোর বৈশিষ্ট্য হবে সার্বজনীন অর্থাৎ আমি একটি জিনিসকে যেভাবে গ্রহণ করছে আমি চাচ্ছি অন্যরা একইভাবে গ্রহণ করবে
প্রথম দাবিটার বিশ্লেষণ :এখানে বলা আছে নৈতিক পদ বা নৈতিক অবধারন বা নৈতিক পদাগুলো হচ্ছে এক ধরনের ছদ্ম ধারণা। এখানে এয়ার আসলে বোঝাতে চেয়েছিল এগুলা আসলে প্রকৃত পদ না কিন্তু দেখতে অনেকটা প্রকৃত পদের মত। যেগুলোকে এক্সচুয়াল ট্রাম বলছি না কিন্তু কোন বাক্যে যখন ব্যবহৃত হয় তখন সেগুলোকে এক্সচুয়াল ট্রাম মনে হয়। এজন্য এগুলো হচ্ছে ছদ্ম ধারণা। এগুলো actual term ট্রাম বলা হচ্ছে না। কারণ যদি বলা হয় he stole the money আর একটা বাক্য হচ্ছে he acted wrongly Stealing that money। এখানে প্রথম বাক্যটি একটা ঘটনা প্রকাশ করছে। এটা একটা তথ্য দিচ্ছে আমাদেরকে। এটা বাস্তবের সাথে সংগতিপূর্ণ না অসঙ্গতিপূর্ণ এটা আমরা দেখতে পারি। যদি প্রকৃত অর্থে সে চুরি করে তবে বাক্যটি সত্য হবে আর চুরি না করলে মিথ্যা হবে। যে কারণে এই বাক্যটিতে যে শব্দগুলো রয়েছে এগুলোকে actual term বলতে পারি।
কিন্তু যদি দ্বিতীয় বাক্যটির কথা বিবেচনা করি তাহলে দেখা যায় এই বাক্যটিতে বলা আছে সে এই টাকাটা চুরি করে অন্যায় করেছে। এই কথাটি যখন বললাম তখন এয়ার বলতে চাইছেন এই যে দুটো সে বাক্য এখানে wrongly কথাটি বলার মাধ্যমে বা wrongly প্রত্যয় ব্যবহার করার মাধ্যমে আসলে দুটো বাক্যের মধ্যে খুব বেশি তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। আমরা প্রথম বাক্য থেকে দ্বিতীয় বাক্যে খুব বেশি কিছু বলছি এমন না। এখানে এমন বিশেষ কোন তথ্য দেওয়া হচ্ছে না, এমনকি বলা যাচ্ছে না যে এই নতুন কোন তথ্য দিচ্ছে এবং এই বাক্যটি অসর। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাই করতে পারছি না এটা আসলে কোন factual term না।তার কারণে আমি এটাকে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাই করতে পারছি না। যেহেতু এটাকে কোনভাবে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাই করতে পারছিনা। তাই এটার আমরা সত্যতা বা মিথ্যাতা নির্ণয় করতে পারছি না। কিন্তু এ ধরনের শব্দগুলো বা পদগুলোকে আমরা প্রতিনিয়ত বাক্যে ব্যবহার করছি। এমনকি এগুলো আসলে কোন বচন। proposition ও প্রকাশ করছে না।কেননা বচন হতে গেলে সেটাকে সত্য বা মিথ্যা হতে হবে। সুতরাং এই ধরনের বাক্যগুলোকে বচন না। যার কারণে এই যে নৈতিক পদটা এখানে ব্যবহার করা হয়েছেএটা কোন factual বিষয় না।তাই সত্য মিথ্যা যাচাই করা যায় না। যার কারণে এটাকে কোন actual term বলা যাচ্ছে না। এটাকে বলা হচ্ছে একটা ছদ্ম ধারণা বা সিডো কনসেপ্ট
দ্বিতীয় দাবি :নৈতিক পদ বা প্রত্যয়ের কাজ হচ্ছে অনুভূতি প্রকাশ করা।he acted wrongly to stealing that money এটি যখন বলা হচ্ছে তখন এই কথাটি বলার মাধ্যমে আসলে তিনি এই কাজটি সম্পর্কে এক ধরনের মনোভাব প্রকাশ করছেন। এটি বলার মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে যে তিনি আসলে এই কাজটিকে অনুমোদন করছেন না। অর্থাৎ এখানে দুই ধরনের মোটিভ কাজ করতে পারে হয়তো তিনি অনুমোদন করতে পারেন আবার অনুমোদন নাও করতে পারেন। এ ধরনের একটা মোটিভ হয়তো প্রকাশ করতে পারে। এবং এগুলো সবই হচ্ছে অভিব্যক্তি মূলক প্রকাশ। আমি যখন বলছি যে সে কাজটি করে অন্যায় করেছে তখন এয়ার আসলে বলতে চেয়েছেন এটা বলার মাধ্যমে আমি আসলে বোঝাতে চাচ্ছি আমি এ কাজটিকে অনুমোদন করছি না। আমি যে অনুমোদন করছি না এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত অনুভূতির ব্যাপার। আমি যেহেতু অনুমোদন করছি না তাই আমি চাচ্ছি অন্যজনও এই কাজটিকে অনুমোদন করবে না। যার কারণে বলা হয়েছে নৈতিক পদের কাজ হল অনুভূতি প্রকাশ করা।
তৃতীয় দাবী:নৈতিক বচনের আরেকটা উদ্দেশ্য হচ্ছে অনুভূতি জাগ্রত করা। এয়ার বলতে চাইছেন যখন আমি বলছি তুমি কাজটি করে অন্যায় করেছ তখন আমি আসলে আশা করছি শ্রোতা আমার এই বাক্যটি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সে কাজটি থেকে বিরত থাকবে। আমি যে কাজটিকে অননুমোদন করছি শুধু তাই না। আমি একটি আদেশ মূলক ভাব প্রকাশ করছি। যখন বলা হচ্ছে he acted wrongly Stealing that money তখন বাক্যটি একটি আদেশ প্রকাশ করছে; যে টাকা চুরি করবে না। এখানে একটা নৈতিক আদেশকে প্রকাশ করা হচ্ছে। এটা শুধুমাত্র নৈতিক অভিব্যক্তি বা আমার অনুমোদন প্রকাশ করছে তাই না বরং একটা আদেশও প্রকাশ করছে। মনের মধ্যে যে আমার মত তুমিও কাজটি করা থেকে বিরত থাকবে। এ ধরনের নৈতিক উক্তি যখন আমি প্রকাশ করছি তখন আমার মধ্যে এক ধরনের নৈতিক আদেশ প্রচ্ছন্নভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। অনুমোদনও হতে পারে অথবা অননুমোদন হতে পারে অর্থাৎ কাজটি করা থেকে বিরত থাকো অথবা কাজটি কর।অর্থাৎ এ কাজটি করা থেকে বিরত থাকো অথবা অপরের উপকার করো।
চতুর্থ দাবি :নৈতিক অবধারণের বৈশিষ্ট্য হবে সার্বজনীন। যখন বলা হচ্ছে চুরি করা অন্যায় বা এ কাজটি করে তুমি অন্যায় করেছ। তখন এখানে একটা স্ট্যান্ডার্ড আসলো।এই পরিপ্রেক্ষিতে তখন তিনি বলছেন বক্তা আশা করছে যে শ্রোতা এর ক্ষেত্রেও সমভাবে সে কথাগুলো অনুসরণ করবে। অর্থাৎ যে পরিস্থিতিতে তিনি নিজে চুরি করাকে অন্যায় হিসেবে বিবেচনা করছেন সেই একই পরিস্থিতিতে যদি অন্যের ক্ষেত্রে উপস্থিত হয় বা বা উদ্ভূত হয় সে ক্ষেত্রে বক্তা আশা করবেন যে সমভাবে সমপরিস্থিতিতে সেই তার মত করে আচরণ করবে। অর্থাৎ একই রকম পরিস্থিতি যদি বারবার উদ্ভূত হয় সে হয়তো চুরি করা থেকে বিরত থাকবে বা অন্যায় থেকে বিরত থাকবে। এ ধরনের একটা মোটিভেশন হয়তো বক্তা শ্রোতাকে দিতে চায়।
এগুলো হচ্ছে এয়ারের আবেগবাদের চারটি দাবি।
এখন এই মতবাদটি আসলে কতটুকু সমর্থনযোগ্য সেটা দাবি করা যায় :এয়ার এখানে দাবি করছেন যে তিনি যে আবেগ বাদী মতবাদটা দিয়েছেন সেটা আসলে যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদ দ্বারা প্রভাবিত না।কারণ তিনি বলছেন যখন আমি বলছি যে নৈতিক বাক্য বা নৈতিক পদগুলো বা মরাল ট্রাম গুলো এক ধরনের ব্যক্তির বিশেষ আবেগ বা অনুভূতিকে প্রকাশ করে এ কথাটি বলার জন্য যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদ দ্বারা প্রভাবিত এটা বলা যায় না। কিন্তু যে সকল ভিত্তিতে তিনি বলেছেন যে নৈতিক পদগুলো অর্থহীন বা নৈতিক পদগুলো অর্থহীন হওয়ার কারণে এর আলোচনা নীতিবিদ্যার দ্বারা করা যায় না। কিসের ভিত্তিতে এয়ার নৈতিক পদগুলোকে অর্থহীন বলেছেন। কেননা তিনি বলেছিলেন একটি বাক্যকে অর্থপূর্ণ হতে হলে এনালিটিক হতে হয় এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাইযোগ্য হতে হয়। একে আমরা চার ভাবে যাচাই করতে পারি। এই যে তত্ত্বটা ভেরিফিকেশন প্রিন্সিপাল যাকে আমরা বলছি এটা যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীরা দিয়েছেন। ভেরিফিকেশন প্রিন্সিপাল যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীদের দেওয়া। যখন তিনি বলছেন নৈতিক পদগুলো অর্থহীন বা নৈতিক পদগুলো কোন অর্থ দেয় না। নৈতিক পদগুলো ব্যক্তির বিশেষ মনোভাব কে প্রকাশ করে বিশেষ আদেশ প্রকাশ করে যেগুলো এক ধরনের আবেগমূলক বাক্য। সেটা প্রচ্ছন্নভাবে আদেশকে প্রকাশ করে বা একই সাথে যখন বলা হয় এ ধরনের ভিত্তি তিনি যখন বলছেন যে এই কারণে নৈতিক পদগুলো হচ্ছে অর্থহীন। যখন বলা হচ্ছে কারণ কি তখন তিনি বলছেন এগুলো কোন ঘটনাকে বা ফ্যাক্ট কে প্রকাশ করেনা। ফ্যাক্টকে প্রকাশ করে না বলে এগুলা আমরা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাই করতে পারি না কিংবা নৈতিক বাক্যগুলো আসলে এনালিটিক না। এগুলো বলার প্রেক্ষিতে তিনি আবেগবাদকে দাঁড় করালেন তখন আসলে বলতে হচ্ছে তিনি যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদকে অনুসরণ করে তিনি এ কথাগুলো বলেছিলেন। অর্থাৎ এয়ার এর মতবাদ যৌক্তিক প্রতক্ষবাদ দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত। এটা হচ্ছে এয়ার এর মতবাদের একটা দুর্বল দিক।
আর একটা তিনি বলেছেন :নৈতিক শব্দের প্রচলিত যে অর্থ বা তাৎপর্য রয়েছে সেগুলো আসলে ব্যহত হচ্ছে এয়ারের মতবাদকে মেনে নিলে। কিভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যদি আমি বলি চুরি করা অন্যায় এয়ার বলেছেন এটা কোন বিশেষ তথ্য দিচ্ছে না। কোন ঘটনাকে প্রকাশ করছে না বা factual না যার কারণে সত্য মিথ্যা নির্ণয় করা যায় না।যার কারণে এটা অর্থপূর্ণ কোনো বাক্য না। হতে পারে এটা কোন অর্থপূর্ণ বাক্য নয় কিন্তু এয়ার এর মতবাদে এটা আসলেই একটা তাৎপর্যপূর্ণ বাক্য। আমি যখন এই কথাগুলো কাউকে বলি সেটা যদি আমার মনোভাব প্রকাশ করে থাকে তারপরও এই কথাগুলোর গুরুত্ব আছে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে আমরা প্রতিনিয়তই এ কথাগুলোর গুরুত্ব অনুভব করি। গুরুত্ব হয়তো একেক জন একেক ভাবে অনুভব করেন কিন্তু এগুলোর প্রত্যেকটি বাক্যেই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। দর্শনের বিচারে একটি বাক্য অর্থহীন হয়ে গেলে সেটা একেবারেই তাৎপর্যহীন হয়ে যায় না
এয়ারের নিজস্ব কিছু মতধারা থাকতে পারে। এয়ার বলতে চাচ্ছেন নীতি দর্শন এবং নীতি বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী দুটো বিষয়। কারণ দর্শনের কাজ হচ্ছে কোন একটা কাজের যৌক্তিক মূল্য বিচার করা এখানে কোন একটা বিষয়কে যৌক্তিক মূল্য বিচার হয়তো meaningless বলতে পারি। কিন্তু আমি যখন সেটাকে বিশ্বাস হিসেবে লালন করি সে বিশ্বাসটা তাৎপর্যপূর্ণ হতেও পারে। দার্শনিক বিচারে কোন একটা কিছুকে আমি অর্থহীন বললেও তাকে একদম অর্থহীন আমি বলতে পারব না। বিভিন্ন নীতি দর্শনের যে মতবাদগুলো রয়েছে সেগুলোকে অর্থহীন বাক্য হলেও সেই মতবাদ গুলোর গুরুত্ব আমরা অস্বীকার করতে পারবো না। যদি বলা হয় চুরি করা অন্যায় এটা একান্তই তোমার ব্যক্তিগত অভিমতের জায়গা থেকে তুমি বলেছ। এটা কেবলই অনুভূতির প্রকাশ মাত্র। কিন্তু কথাটির গুরুত্ব আসলে সব সময় সে রকম থাকে না। এক্ষেত্রে কথাটির তাৎপর্য ব্যাহত হচ্ছে। এটা হচ্ছে এয়ারের মতবাদের আরও একটা দুর্বল জায়গা।
আর একটা হচ্ছে তাৎপর্যপূর্ণ এবং অর্থপূর্নতার পার্থক্য
তাৎপর্যপূর্ণ এবং অর্থপূর্ণের পার্থক্য যদি আমরা নির্ণয় করতে যাই একটি বাক্য অর্থহীন হলেই সেটা তাৎপর্যহীন হয়ে যায় না।
নৈতিক বিতর্ক এবং তথ্যজনিত বিতর্ক
এয়ার বলেন নৈতিক বিতর্ক আমরা দুই ভাবে আলোচনা করতে পারি
- নৈতিক বিতর্ক
- অন্যটি হচ্ছে তথ্যজনিত বিতর্ক
নৈতিক বিতর্ক আসলে কেমন হতে পারে। আমরা যখন বলি চুরি করা অন্যায়। কেউ একজন বলেছে এবং অন্যজন যদি বলেন যে না চুরি করা ন্যায়।এই বিতর্কের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় মনে করি যে নৈতিকভাবে উপস্থাপন করে আমরা বিতর্কে সৃষ্টি করছি।কিন্তু এই দুই ধরনের বিতর্ক নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এদের সম্পর্কে আমরা যে বাক্যগুলো বলছি বা যে যুক্তিগুলো দিচ্ছি তার সবগুলোই কিন্তু factual বিতর্ক বা তথ্যজনিত বিতর্ক হিসেবে পর্যালোচিত হচ্ছে। যখন বলা হচ্ছে চুরি করা অন্যায় তখন একজন যদি এর পক্ষে থাকে অন্যজন যদি এর বিপক্ষে থাকে এবং বলেন যে চুরি করা অন্যায় নয় সে ক্ষেত্রে দুজন ব্যক্তি দুই ধরনের মতবাদ দিয়ে থাকেন। যিনি বলছেন চুরি করা অন্যায় এবং তার প্রেক্ষিতে তিনি যে যে যুক্তিগুলো দিয়েছেন অর্থাৎ যে যে এই কারণে চুরি করা অন্যায় তার প্রত্যেকটা হচ্ছে এক একটা তথ্য। তেমনি এর বিপরীতে যিনি থাকছেন তিনি বলছেন যে চুরি করা অন্যায় নয়। তিনি তার পরিপ্রেক্ষিতে সেই ধরনের তথ্য দিচ্ছেন।এ কারণে এয়ার বলছেন যে নৈতিক বিতর্ক বলে আসলে কিছু নাই । নৈতিক বিতর্ক একপর্যায়ে এসে তথ্য জনিত বিতর্কে রূপান্তরিত হচ্ছে বা পরিণত হচ্ছে। যেহেতু নৈতিক বিতর্কের শেষ পর্যায়ে এসে আমরা কতগুলো fact বা ঘটনাকেই উপস্থিত করছি। সেজন্য বলা হচ্ছে নৈতিক বিতর্ক কখনো সমাধান হওয়ার মতো না। এয়ার বলছেন নৈতিক পদগুলো যেহেতু এক ধরনের অনুভূতিকেই প্রকাশ করে যাচ্ছে তাই এটি সমাধান করা যায় না। যেহেতু নৈতিক পদগুলো ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতি বা অভিমতের প্রকাশ করে সেহেতু এই বিতর্কে সমাধান সম্ভব নয়। এটা যদি মেনে নেয়া যায় তাহলে বলা যায় দর্শন বা সমাজবিজ্ঞানীদের যে সকল তথ্য রয়েছে।সে সকল তথ্যের সাথে প্রত্যেকই কিন্তু একমত নয়। একজন বুদ্ধিবাদী তিনি ভাববাদী নয়। একজন জড়বাদী তিনি বুদ্ধিবাদী নয়। দর্শনের ক্ষেত্রে যে বিকল্প ধারণাগুলো রয়েছে এক্ষেত্রে কোন মীমাংসা আসা সম্ভব নয় বলে সেগুলোকে আমরা অর্থহীন বলতে পারিনা। একজন ভাববাদী একজন বস্তুবাদীর তত্ত্বের সাথে কখনোই একমত পোষণ করবে না কিন্তু তারপরও এদের অর্থহীন বলা যায় না। এটা হচ্ছে এয়ারের মতবাদের আরেকটা সমালোচনা
নীতির ক্ষেত্রে যুক্তির অবকাশ :কোন একটা বিষয়ে যুক্তি প্রদানের মাধ্যমে আমরা সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারলাম না। তার মানে এটা নয় যে আমি সেটাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাববো না। নৈতিক বিতর্কগুলো থেকে আমরা একেবারেই সমাধানে আসতে পারবো না এমন কিছু না। অন্তত আমরা আমাদের অবস্থানকে ক্লিয়ার করতে পারি যে আমি এ কারণে গর্ভপাতকে অনুমোদন করছি না। হতে পারে আমার অপরপক্ষ সেগুলোকে মেনে নিচ্ছে না। কিন্তু এমন না যে আমি আমার মতটাকে বা আমি যেটাকে সমর্থন করছি অথবা যেটার সাথে দ্বিমত পোষণ করছি সেটাকে একেবারেই প্রতিপালন করতে পারছিনা। তার সমর্থনে আমি যুক্তি দিতে পারছি। এ কারণেই বলা হচ্ছে যে নীতির ক্ষেত্রে যে একেবারেই যুক্তির অবকাশ নেই সেটা আসলে বলা যায় না।
এগুলো হচ্ছে এয়ার এর মতবাদের সমালোচনা কিছু দিক। নীতির ক্ষেত্রে যুক্তির অবকাশ রয়েছে। এয়ার বলতে চাইছেন যে নৈতিক যে বিষয়গুলো রয়েছে বা মোরাল morel term গুলো রয়েছে সেগুলোকে আমরা যুক্তির বিচারে করতে পারছি না। কারণ এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা আমাদের মধ্যে কাজ করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এমন না যে একেবারে আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় থেকে যাচ্ছি।কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা যে বিশ্বাস করছি বা আমার যে ভাবাবেগটার ক্ষেত্রে কিছু না কিছু যুক্তি দিতে পারি । অন্যরা হয়তোবা আমার যুক্তিটাকে গ্রহণ করছে না বা আমি বলতে পারি যে তোমার যুক্তি হচ্ছে আমার যুক্তি চাইতে দুর্বল। নীতিবিদ্যার ক্ষেত্রে বা নৈতিকতার ক্ষেত্রে যে বিতর্ক সেক্ষেত্রে আমি বলতে পারি যে আমি আমার জায়গা থেকে আমি সঠিক কিংবা তুমি বিপরীত মতটাকেও সমর্থন করছো। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে বলতে পারিনা যে আমারটা উচ্চমানের বা তোমারটা একেবারে নিম্নমানের।এ ধরনের যুক্তি কিন্তু আমরা নৈতিক বিতর্কের ক্ষেত্রে করতে পারি না। হয়তো আমরা বলতে পারি এক্ষেত্রে তোমার মতটা আমার মত থেকে ভিন্ন।
এয়ারের আবেগবাদের সমালোচনা :
১.পরিচিত ভাষার ঐতিহ্য রদবদল প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টিভঙ্গি :
এয়ার যে নৈতিক শব্দ ও ধারণার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে নৈতিক শব্দের প্রচলিত অর্থ বহুলভাবে ব্যহাত হয়েছে এবং অন্য কোন প্রকারের ঘাটতি পূরণের অনুমোদনও এ তত্ত্বে নেই।
অনুভূতিবাদ যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে প্রাত্যাহিক জীবনে নৈতিক প্রত্যয় ও বিশ্বাসের গুরুত্ব যে বহুল অংশে হ্রাস পায় তা নিঃসন্দেহে। উদাহরণস্বরূপ হত্যা ও পরনিন্দাকে যদি কেউ গুরুত্ব সহকারে অন্যায় বা অনুচিত বলে করলে মন্তব্য করে, তবে তার এই মন্তব্য কে শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত আবেগের প্রকাশ বলে ছেড়ে দিয়ে মন্তব্যটি যে অত্যন্ত লঘু ও গুরুবর্জিত মন্তব্য হয়ে পড়ে এটা অত্যন্ত স্পষ্ট।
নীতির ক্ষেত্রে এয়ার যে নতুন ভাষা ও ব্যাকরণের আমদানি করেছেন তাতে নৈতিক প্রত্যায়গুলোর সনাতন ও প্রচলিত ব্যবহারগুলি রক্ষিত হয়নি।
তিনি বলেছেন “Ethics is a branch of knowledge is nothing more than a department of psychology and sociology” এটি নীতিবিদ্যার প্রকৃত রূপ হলে তিনি যে পরিছন্ন রূপের কথা বলেছেন সেটি নিত্যান্তই অপ্রয়োজনীয় ও বৃথা এটাকে logic of science বলা সঙ্গত।
বর্তমানে আবেগ বাদী দার্শনিক যখন nothing more than department of psychology and sociology বলে মন্তব্য করেন তাতে লুপ্তপ্রায় প্রাচীন মতবাদের প্রতিফলন পাওয়া যায়।
যৌক্তিক দৃষ্টবাদের প্রভাব :
আবেগবাদ স্বনির্ভর মতবাদ এটি এয়ার বলেছেন। কিন্তু একটি সংশ্লেষণী উক্তিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে গেলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা দ্বারা যাচাইযোগ্য হতে হবে যা যৌক্তিক দৃষ্টবাদের মূল কথা। অতএব আবেগবাদের সাথে যৌক্তিক দৃষ্টবাদী তত্ত্বটি জড়িত নয়। এয়ার এ দাবিটি সত্য নয়।
এয়ারের সত্যায়ন নীতি অনুযায়ী, একটি বাক্য অর্থপূর্ণ হতে হলে সেটিকে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সত্যায়িত হতে হবে। নৈতিক উক্তিগুলো এর আওতায় পড়ে না, কারণ এগুলো সংশ্লেষণী উক্তি হিসেবে সত্যায়ন করা যায় না। ফলে, নীতিবিদ্যা বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচিত হয় না।
এয়ার বলেন, যখন আমরা নৈতিক মন্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিই, তা প্রকৃত যুক্তি নয়। কারণ, যুক্তির সাথে নৈতিক মন্তব্যের সম্পর্ক পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ না করা গেলে সেটি ‘যুক্তি’ হিসেবে গৃহীত হতে পারে না। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, নৈতিক আলোচনা এক ধরনের অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়, যা যুক্তির মূল কাঠামোর বাইরে।
তাৎপর্যতা ও অর্থপূর্ণতার অর্থ :
এয়ারের দর্শনে “পরনিন্দা করা খারাপ” এই উক্তিটি অর্থহীন বলেছেন। এটি অর্থহীন নয় কারণ কোন নৈতিক উক্তি যদি বক্তা শ্রোতাকে উদ্দেশ্য করে য বলে তাহলে এটি শ্রোতা বুঝতে পারে।
ভাষার বোধগম্যতা ও অর্থপূর্ণতার যে তত্ত্ব এয়ারপন্থী যৌক্তিক দৃষ্টিবাদীরা দিতে চেয়েছেন তা অতীব স্কুল। এতে সাহিত্য,কলা ও দর্শনের সূক্ষ্ম ও অমূর্ত্য প্রায় সমস্ত ধারণা ও ভাব অর্থহীন ও তাৎপর্যপূর্ণহীন বলে চিহ্নিত হয়ে পড়ে। যা সঠিক নয়।
এয়ার সচরাচর নৈতিক ভাষার অর্থকে পূর্ণবিন্যাসের যে প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছিলেন সেটি অনেক ক্ষেত্রে অনধিকার চর্চা দোষে দোষী।
বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য তৈরি ভাষাকে সর্বসাধারণের কাছে হাজির করে বলেছেন যদি সর্বসাধারণেরা এ ভাষা ও এর বাক্যের অর্থ না বোঝে তাহলে এ বাক্য ও এ বিদ্যা ভূয়া।তাহলে পদার্থের E=mc*2 এই সূত্রটি যদি সাধারন মানুষ না বুঝে তাহলে এটি তার মতে ভুয়া। এটি যুক্তিসঙ্গত নয়।
তাৎপর্যপূর্ণতা ও অর্থপূর্ণতা এয়ারের ন্যায় সকল দৃষ্টিভাতীদের মন্ত্রবলি। অর্থাৎ তাৎপর্যপূর্ণ হলেই সত্য। কিন্তু অনেক বাক্য আছে যেগুলো তাৎপর্যপূর্ণ নয়। ঈসা আলাইহি অসাল্লাম যখন সত্যের বাণী নিয়ে আসে এটি তাৎপর্যপূর্ণ না হলেও সত্য ছিলো।
নীতির ক্ষেত্রে যুক্তির অবকাশ
নৈতিক বিতর্কের সর্বশেষ পর্যায়ে প্রতিপক্ষ যখন তার মতবাদকে আঁকড়ে ধরে এমতাবস্থায় এমন সিদ্ধান্তে আসি যে তার নীতিজ্ঞানে বিভ্রাট আছে। অর্থাৎ তার নীতিজ্ঞান নিচু স্তরের এমন মন্তব্য করার কোন নিরপেক্ষ ও যুক্তিনিষ্ট অধিকার অনুভূতিবাদেরঔ আছে কিনা তা বলা যায় না।
যাদের সাথে নৈতিক বিতর্ক হয়ে শেষে গিয়ে যখন প্রতিপক্ষ তার মতবাদকে আঁকড়ে ধরে। তখন এয়ার বোঝাতে চেয়েছেন সে আমাদের পরিচিত সমাজের বাইরের এক অদ্ভুত জীব এ ধরনের সিদ্ধান্তের কোন নৈতিক ভিত্তি আছে বলে মনে হয় না।
এয়ার বলেছেন নৈতিক পদগুলোর সত্য মিথ্যা নির্ণয় করা যায় না। তাই এগুলো অর্থহীন। নৈতিক যুক্তিকে যুক্তিহীন বলে এ দাবি করাটা অনেকটা কুযুক্তি দোষে দোষী। কারণ বক্তা যখন শ্রোতাকে উদ্দেশ্য করে কোন নৈতিক উক্তি বলে। যদিও এটার সত্য মিথ্যা নির্ণয় করা যায় না। তবুও শ্রোতা বুঝতে পারে বক্তা আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন।
এয়ারের এক গোষ্ঠীর জন্য তৈরিকৃত ভাষা বা প্রত্যযয়কে সকল শ্রেণীর ওপর প্রয়োগ করার যে অপচেষ্টা রাসেল তাকে শ্রেণী অনুপপত্তি বলেছেন।