ইয়েমেনী হুথি বিদ্রোহী | কারা, কেন, কিভাবে?

সুন্নী সম্প্রদায়ের বিশ্বাসের সাথে ‘জাইদি শিয়াদের’ পার্থক্য এখানেই যে- সুন্নীরা জিহাদের চেয়ে ঐক্যের গুরুত্ব বেশি দেন।

মুহাম্মদ ইরফান সাদিক

২০১৫ সাল থেকে সৌদি-জোট ‘ইয়েমেনের হুথি’ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। যা সাম্প্রতিককালের ইতিহাসে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ “মানবিক সংকটে” পরিণত হয়েছে এবং এই সংকট এখনও চলমান। 

কিন্তু কারা এই হুথি জনগোষ্ঠী? কেন এই যুদ্ধের সৃষ্টি হয়েছিলো? তা জানতে হলে আমাদের বহুবছর পেছনে যেতে হবে, একই সাথে জানতে হবে হুথি সম্প্রদায়ের সাথে সাধারণ সুন্নী কিংবা শিয়া মুসলিমদের ধর্মীয় মতাদর্শগত পার্থক্য। 

হুথি সম্প্রদায় ইয়েমেনের একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়; যা ইয়েমেনের জনসংখ্যার প্রায় ৩০%। হুথি জনগোষ্ঠী ইসলাম ধর্মের শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী হলেও, ১২ ইমামের শিয়া মতবাদ থেকে হুথিদের মতবাদ ভিন্ন। যা কিনা ইরাক, ইরান কিংবা লেবাননের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া মুসলিমদের থেকে হুথিদের আলাদা করেছে। হুথিদের ধর্মীয় ভাবে বলা হয় ‘জাঈদি শিয়া।’

জাঈদ- শব্দটি এসেছে জাঈদ ইবনে আলী থেকে। জাঈদ ইবনে আলী হলেন হযরত আলীর (রাঃ) নাতি। যিনি জাঈদ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন এবং উমাইয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কারণে শিরচ্ছেদ করে তাঁকে হত্যা করা হয়। হযরত আলী (রাঃ) এর পর, অনেকেই জাঈদ ইবনে আলীকে ইমাম মেনে শিয়া অন্তর্ভুক্ত হন।

জাঈদ ইবনে আলীকে উনার সময়ে, সিংহের সাথে তুলনা করা হতো এবং উনি সারাজীবন অন্যায়, শোষনকারী এবং জুলুমবাজ শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তাই জাইদি সম্প্রদায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ বা প্রতিবাদ করাকেই ধর্মে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখে।

সুন্নী সম্প্রদায়ের বিশ্বাসের সাথে ‘জাইদি শিয়াদের’ পার্থক্য এখানেই যে- সুন্নীরা জিহাদের চেয়ে ঐক্যের গুরুত্ব বেশি দেন।

হুথিরা হাজার বছর ধরে উত্তর ইয়েমেনের পার্বত্যভূমিতে বসবাস করে আসছে যা বর্তমান সময়ে সানা প্রদেশ হিসেবে পরিচিত। এই প্রদেশটি ইয়েমেন-সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী অঞ্চল।

১৯৭৮ সালে, উত্তর ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন একজন জাইদি শিয়া- আলী আব্দুল্লাহ সালেহ। তিনি উত্তর ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হলেও তার ক্ষমতার লোভ ছিল সীমাহীন। সালেহ, ব্যাপক চেষ্টা ও ধূর্ততার মাধ্যমে উত্তর ইয়েমেন ও দক্ষিণ ইয়েমেন কে একত্রিত করে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘ইয়েমেন’ এর সৃষ্টি করেন। ইয়েমেন সৃষ্টি হয়- তার ক্ষমতায় আসার ১২বছর পর, ১৯৯০ সালে।

আশির দশকের শেষেরদিকে, সালেহ’র প্রশাসনিক সহায়তায় (উস্কানিতে) সৌদি কিছু ‘সালাফি’ ইন্সটিটিউট স্থাপন করে উত্তর ইয়েমেনের সীমান্ত অঞ্চলে। সালেহ এই উস্কানিমূলক কাজকে সমর্থন এবং সামরিকভাবে সহায়তাও করেছিলেন, সৌদি বাদশাহর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে। যা হুথি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ভাবাদর্শ, সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আঘাত হানে। হুথি জনগোষ্ঠী তাদের সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ভাবাদর্শ বজায় রাখার জন্য ‘হুসেইন বদরুদ্দিন আল-হুথি’র নেতৃত্বে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ শুরু করে। এভাবেই ‘হুথি মুভমেন্ট‘ বা হুথি বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটে।

হুথি জনগোষ্ঠীর এই প্রতিবাদ দীর্ঘদিন চললেও ২০০৩ সালের আমেরিকা কর্তৃক অন্যায়ভাবে ইরাক আক্রমণ— ‘হুথি মুভমেন্ট’ গ্রুপকে প্রথমবারের মত ইয়েমেনে রাজনৈতিকভাবে প্রবল সক্রিয় করে তোলে। বুশ প্রশাসনের ইরাক আক্রমণের বিরুদ্ধে হুথিরা নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ করে। এই বিক্ষোভগুলোর কেন্দ্রস্থল ছিলো মসজিদ, নামায শেষে হুথিরা প্রতিদিনই বিক্ষোভে নামতো, নিন্দা জানাতো।সরকারিভাবে ইয়েমেনি প্রশাসন এই ব্যাপারে কোন মন্তব্য না করায়, হুসেইন বদরুদ্দিন আল-হুথি প্রেসিডেন্ট সালেহ’র কড়া সমালোচনা করেন। সালেহ কে ”আমেরিকানদের মদদপুষ্ট স্বৈরশাসক” আখ্যা দেন। এরই মাঝে- কিছু হুথি বিদ্রোহী সানা প্রদেশের বিভিন্ন মসজিদে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে থাকলে, সালেহ তার সৈন্য ও পুলিশ বাহিনী পাঠিয়ে হুথিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করে।

ক্র‍্যাকডাউনের মাধ্যমে সেদিন রাতে প্রায় ৩০০ বিক্ষোভকারী হুথি গ্রেফতার হয়। অনেকেই নিহত এবং গুম হয়। সরকারি বাহিনী ‘হুসেইন বদরুদ্দিন আল-হুথি’ কে না পেয়ে তার ছোটভাই ‘আব্দুল মালিক আল-হুথি’ কে তুলে নিয়ে যায়। এটিই হুথি বিদ্রোহীদের সাথে সরকারি বাহিনীর প্রথম সশস্ত্র-সংঘর্ষ। সালেহ’র নির্দেশনায় হুসেইন বদরুদ্দিন আল-হুথি কে হত্যা করা হয় ২০০৪ সালে। পরবর্তীতে হুথিদের নেতৃত্বে আসেন বদরুদ্দিনের ছোটভাই, আব্দুল মালিক আল-হুথি।

ধর্মীয় ভাবাদর্শগত পার্থক্যের কারণে সৌদি-আরব ‘ইয়েমেনের সরকার’কে এবং ইরান ‘হুথিদের’কে সমর্থন দিতে থাকে। হুথিরা নিজেদের সশস্ত্র আন্দোলন জোরদার করে। কিন্ত ইরানকে সরাসরি সহায়তা করতে নিষেধ জানায়।

ভূ-রাজনৈতিক কারণে সৌদি-আরব চায়নি, হুথিরা ক্ষমতা অর্জন করুক। কারণ বাব-এল-মান্দেব প্রণালীর বেশিরভাগ অংশই ইয়েমেনের অধীনে। লোহিত সাগরকে সংযুক্ত করা এই প্রণালীর একপাশে এশিয়া, অন্যপাশে আফ্রিকা মহাদেশ। একইভাবে- এই প্রণালী লোহিত সাগর ও সুয়েজ খালের মাধ্যমে ভূমধ্যসাগরে গিয়ে মিশেছে। যার পার্শ্ববর্তী দেশগুলো হচ্ছে- জিবুতি, ইরিত্রিয়া, ইয়েমেন, সৌদি-আরব, মিশর ইত্যাদি। প্রতিদিন এই প্রণালী দিয়ে অন্তত ৬২ লাখ ব্যারেল তেল যাতায়াত করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। (তথ্যসূত্রঃ গুগল/উইকিপিডিয়া) তাই এই প্রণালী শিয়া-জাঈদী বিদ্রোহী বাহিনীর অধীনে আসুক, তা সৌদিরা চায়নি।

দীর্ঘদিন চলা সশস্ত্র আন্দোলন ক্রমশই ভয়ংকর রূপ নিতে থাকে। ইরান অস্ত্র সহায়তা করায়, হুথিদের জন্যে বিভিন্ন শহর দখল করা সহজ হয়ে পড়ে। যদিও ইরান বারবারই অস্ত্র-সহায়তা অস্বীকার করে আসছিল। ইরানের জন্যে এটি কেবল সৌদিদের বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। সেটা সমুদ্রসীমানায়-ই হোক; কিংবা তেল বাণিজ্যে। দীর্ঘদিনের সংঘর্ষের পর- ২০১০ সালে, হুথি বিদ্রোহী-সরকারপন্থীরা ‘যুদ্ধবিরতি’ চুক্তিতে আসে। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

২০১১ সালে, আরব বসন্ত ইয়েমেনে পৌছালে, হুথি বিদ্রোহী, দক্ষিণ ইয়েমেনী সেপারেটিস্ট (যারা ইয়েমেনের অখন্ডতায় বিরোধী) সহ নানা গ্রুপ একত্রে সালেহ কে পদত্যাগ করার জন্য আন্দোলনে নামে- যা ১০ মাস স্থায়ী ছিলো। ১০ মাসের প্রবল আন্দোলনের মুখে ৩৩ বছর পর স্বৈরশাসক আলী আব্দুল্লাহ সালেহ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্ধারিত হয় সালেহ’র ডেপুটি প্রেসিডেন্ট আব্দুর মানসুর আল-হাদি। উনিও সৌদীদের মদদপুষ্ট ছিলেন।তখন জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলো থেকে ইয়েমেনকে ৬টি অংশে বিভক্ত করার দাবি আসে। যা স্বভাবতই, হুথি বিদ্রোহীদের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পরিমাণ হ্রাস করবে। তাই এই বিভক্ত নীতি- তখনই ব্যর্থ হয়ে যায়।অন্যদিকে দক্ষিণে বাড়তে থাকে সেপারেটিস্ট মুভমেন্ট এর সশস্ত্র আন্দোলন, উত্তর-পশ্চিমে হুথি, এবং কিছু অংশে আল-কায়েদা আক্রমণ। 

আব্দুর মানসুর আল হাদি ক্ষমতায় এসেছিলেন সালেহ’র ৩৩ বছরের দুর্নীতি, বিশ্বব্যাংকের পাহাড়সম ঋনের বোঝা, অধিকাংশ বেকার জনগণের স্বস্তির আশা হিসেবে। কিন্তু তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনদিকেই উন্নতিই ঘটাতে পারেননি। উলটো আরো বেড়েছে বেকারত্ব। ইয়েমেন আরো গরীব রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এরই মাঝে দায়েশ এবং আল-কায়েদা ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে আক্রমণ করে কিছু অংশের দখল নিয়ে নেয়। হাদি প্রশাসন আল-কায়েদা আক্রমণ ঠেকাতে পারেনি, দিনদিন আল-কায়েদার আক্রমণ ও আয়তন বেড়েছে।একই সাথে বেকারত্ব এবং তেলের দাম যেন আকাশ ছুঁয়েছে। এত সমস্যা- ইয়েমেনের ছোট-ছোট বিদ্রোহী দলগুলোকে একত্রিত করেছে। 

ইয়েমেন, যার কিছু অংশ তখন চলছে হাদি প্রশাসনের অধীনে, কিছু অংশ আল-কায়েদা ও দায়েশের অধীনে, বাকি উত্তর অংশ চলছে হুথিদের অধীনে। দক্ষিণে চলছে সেপারেটিস্টদের সশস্ত্র আন্দোলন। এরইমধ্যে, সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহ তার চিরদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী- হুথিদের মিলিটারি সহায়তা দেবার জন্য হাত বাড়ান। ৩৩ বছর ক্ষমতায় থাকার পর, তার অনুগত একটি মিলিটারি বাহিনী তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। আর সালেহ’র পরিকল্পনা ছিলো- হুথি বাহিনী এবং নিজস্ব বাহিনীর সহায়তায় হাদি প্রশাসন কে পদত্যাগ করিয়ে, আবারো ক্ষমতা নিজের করে নেয়ার। 

হুথি বিদ্রোহীরাও ইরান এবং সালেহ বাহিনীর থেকে ব্যাপক সামরিক সহায়তা পেয়ে পূর্ণোদ্দমে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অচিরেই হুথি ও সালেহ’র যৌথ বাহিনী ইয়েমেনের বড়-বড় শহর দখল করে ফেলে এবং হুথি বিদ্রোহীরা যখন সানা প্রদেশে প্রবেশ করে; তখন তারা নিজেদের নতুন নামে সজ্জিত করে। “আনসার-আল্লাহ” বা “আল্লাহর সাহায্যকারী” হিসেবে। 

এর কিছুদিন পর হুথি বিদ্রোহীরা এডেন দখল করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ চালাতে থাকে, যেহেতু প্রেসিডেন্ট হাদি তখন এডেনে ছিলেন।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট হাদি শেষপর্যন্ত সৌদি-আরবে পালিয়ে গেলেন। আর হুথিরা এডেন এয়ারপোর্ট দখলে নিয়ে নিলো। এয়ারপোর্ট দখলে নিয়ে হুথিরা তেহরানের সাথে বিমান যোগাযোগ সচল করে এবং ‘তেলের দাম কমানোর’ প্রতিশ্রুতি দেয়। একই সাথে আক্রমণ এগোতে থাকে বাব-এল-মান্দেব প্রণালীর দখল নিতে।

নির্বাসিত সরকার মানসুর হাদি সৌদিতে। সৌদিআরব ২০১৫ সালে ফ্রান্স, ব্রিটেন, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় অন্যান্য আরব দেশকে নিয়ে জোট গঠন করে। যাতে সায় জানায় ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হাদি। জোটের উদ্দেশ্য ছিলো বৈধ হাদি সরকারকে ক্ষমতায় বসানো এবং হুথিদের দূর করা। এতে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ সায় জানিয়েছিলো, কিন্তু যুদ্ধে নিরপরাধ মানুষ হত্যা ছাড়া কিছুই করতে পারেনি জোট।

যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে সহায়তার নামে সৌদি জোটের কাছে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে।

২০১৫ সালে জোটগঠন ও পরবর্তী দুইবছর টানা সংঘর্ষের পর, সালেহ বুঝতে পারলেন পশ্চিমা সহ বিভিন্ন দেশ হাদি সরকারের পক্ষেই লড়বে, হুথি বা সালেহ’র জন্য নয়। তাই সালেহ পুনরায় ক্ষমতায় বসার জন্য হুট করেই ঘোষণা দিলেন- এখন থেকে তার সেনাবাহিনী সৌদিদের পক্ষ হয়ে লড়বে জোটদের সাথে, হুথিদের বিরুদ্ধে। যাতে যুদ্ধ দ্রুত শেষ হয়। 

এই বক্তব্যের পেক্ষিতে- হুথিরা সালেহ কে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দেয়। এবং মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সালেহ কে হত্যা করে হুথি বিদ্রোহীরা। কিন্তু, এর ফলাফল বাজেভাবে দেখা দেয় হুথিদের জন্য। সালেহ’র পালিত সেনাবাহিনী পরিণত হয় ভয়ংকর শত্রু হিসেবে। সালেহ’র বাহিনী ছাড়াও, সৌদি জোটের অবরোধ ও বোমাবর্ষণ, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা, দক্ষিণে সেপারেটিস্টদের যুদ্ধ একটি নারকীয় অবস্থা তৈরি করেছে ইয়েমেনে।

ইয়েমেনে বর্তমানে দক্ষিনের কিছু অংশ চালাচ্ছে সেপারেটিস্টরা, কিছু অংশ সরকার বাকি অংশ হুথিরা।

২০২০ সালের প্রথমদিকে হুথিরা ৩৫০জন গ্রেফতারকৃত দক্ষিণ ইয়েমেনিকে মুক্ত করে আলোচনার প্রস্তাব দেয় এবং অন্যদিকে জোটবাহিনী মার্চ থেকে মে পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ রেখেছিল করোনা মহামারীর জন্য। কিন্তু সেটা সাময়িক, এই যুদ্ধের স্থায়ী অবসান আজও হয়নি। 

সৌদিজোট হাদি সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর কথা বললেও জোটের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি দেশেরই ইয়েমেন নিয়ে আলাদা আলাদা কুৎসিত পরিকল্পনা আছে। যেমনঃ আরব-আমিরাতের অস্ত্র সহায়তায় দক্ষিণে সেপারেটিস্টরা যুদ্ধ শুরু করেছে হুথি এমনকি হাদি প্রশাসনের বিরুদ্ধেও। যদিও জোটের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাস দমন ও সরকার কে ক্ষমতা বন্টন করা।

অন্যদিকে, সৌদি-আরবের বোমা হামলার ৩ভাগের এক ভাগ হামলা হয়েছে বেসামরিক স্থানে। এরমাঝে আছেঃ বিয়েবাড়ি, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল এমনকি কবরস্থান।

২০১৯ সালের শেষে, ইয়েমেনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২লাখ ৩০ হাজারে। এবং ধারণা করা হয়, এরমাঝে ১ লাখ ৩১ হাজার মানু্ষ মারা যায় ক্ষুধায়। (তথ্যসূত্রঃ দ্যা মিডিল ইস্ট আই)

উইকিপিডিয়া এবং জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী- ৫০ লক্ষ মানুষ গৃহহীন, ১কোটি ৮০ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের অভাবে ভুগছে।

অন্যদিকে, যুদ্ধের কারণে ২০১৬ সালে শুরু হওয়া দুর্ভিক্ষে ২বছরে অন্তত ৮৫হাজার শিশু মারা গেছে। (তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া- ২০১৮ পর্যন্ত) এরই মাঝে কলেরা ও ডিপথেরিয়া মহামারী আকার ধারণ করেছে ইয়েমেনে।

ইউনিসেফের মার্চ ২০২০ এর তথ্যমতে, ৫বছরের নিচের প্রায় ২০লাখ শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। একই সাথে ৩৭লাখ শিশুর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে যুদ্ধের কারণে।

হুথিদের ইরানী অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করতে সৌদি-জোটের করা অবরোধে ইয়েমেন অচল হয়ে পড়েছে। না আসছে খাদ্য সহায়তা, না স্বাস্থ্যসেবা, না জ্বালানি তেল। যার কারণে আবর্জনা ও মৃতদেহ গাড়িতে বহন করার মত জ্বালানি তেলও অবশিষ্ট নেই ইয়েমেনে। এরই মাঝে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় মৃতের সংখ্যা আরো বাড়ছে। (যদিও হুথি কমান্ডারগণ সৈন্যদের মনোবল ধরে রাখতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চেপে গিয়েছেন) ইয়েমেনের প্রতিটি শহরেই উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা ও হাসপাতালের অভাব। সম্পূর্ণ ইয়েমেনই যেন একটি শ্মশান। দীর্ঘদিনের যুদ্ধে ইয়েমেন আজ একটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এর স্থায়ী সমাধান কোথায়?

জাতিসংঘই কিংবা বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলোই বা কেন নিশ্চুপ অবস্থান করছে? তাহলে তারা কি তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করছে? এই প্রশ্ন থেকেই যায়।

লেখক, 

শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 

যোগাযোগঃ Rajinisback13@gmail.com

Writing is not a view of the School of Thought, it is entirely the opinion of the Author.

If you want to share your thought, you can mail us at- editor.sot@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *